সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » খোকা পরিবারকে না জানিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন
খোকা পরিবারকে না জানিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন
পক্বিষকাল ডেস্ক- ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। পরিবারের অন্য কাউকে কিছু না জানিয়েই গোপনে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। মেলাঘরের ট্রেনিং ক্যাম্পে ট্রেনিং শেষে ঢাকায় অপারেশনের ফাঁকে গোপনে একবার মায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত যেসব স্লোগান জনপ্রিয় হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম একটি ছিল খোকার। ১৯৭১-এর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন নেতা রুহুল আমীন এবং গোপীবাগের মাসুদসহ (বুড়া) বেশ কয়েকজন মিলে প্রথমে খোকারা যান নরসিংদীর শিবপুরে। ওখানে কয়েক দিন অবস্থানের পর যুদ্ধের ট্রেনিং নেয়ার জন্য আগরতলার পৌছলে তাদের রিসিভ করেন শহীদুল্লাহ খান বাদল (রাশেদ খান মেননের ছোট ভাই)। সেখান থেকে প্রথমে বটতলাস্থ সিপিএম অফিসে গিয়ে মেনন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে চলে যান দুই নাম্বার সেক্টরে। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ছিলেন সেই সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার। মেজর হায়দারের (পরে কর্নেল হায়দার) নেতৃত্বে ঢাকার মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। দুই নাম্বার সেক্টরের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের নাম ছিল ‘মেলাঘর’।
মেলাঘরের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বসবাসের জন্য একেবারেই উপযুক্ত ছিল না। পাহাড় আর ঘনজঙ্গলে পূর্ণ ছিল চারিদিক। লাল মাটির উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ একটু বৃষ্টি হলেই বেশ পিচ্ছিল হয়ে পড়তো। সৌচকর্ম সারতে যেতে হতো বনের ভেতরে। এ ক্যাম্পে বেশিরভাগই ছিল ঢাকা শহরের ছেলে, এ রকম পরিবেশে থাকতে তারা অভ্যস্ত ছিল না। তিনি ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মরহুম মেসবাহ উদ্দিন সাবু এক সঙ্গে থাকতো। এ ক্যাম্পেই তার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয় আবু সাইদ খান, শাহাদত চৌধুরী, ফতেহ আলী চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সুলতান উদ্দিন রাজা, আতিকুল্লাহ খান মাসুদ, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, পল্টনের মানিক (পরে শহীদ), গাজী গোলাম দস্তগীর, মিজান উদ্দিন আহমেদ, শহিদুল্লাহ, শিল্পী শাহাবুদ্দিন, মাসুদ, কাজী ভাই, উলফাৎ ও বাকী (পরে শহীদ) অন্যতম। মেজর হায়দারের অধীনে তিন সপ্তাহ গেরিলা ট্রেনিং শেষে তারা সম্মুখ যুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহন করেন ক্যাপ্টেন গাফফারের (পরে জাতীয় পার্টি নেতা ও মন্ত্রী) নেতৃত্বাধীন সাব সেক্টরে।
ওখানে ট্রেনিং শেষ করার পর প্রথমদিকে কসবা-মন্দভাগ (মির্জাপুর) যুদ্ধের নয় মাসই প্রতিদিন এক বা একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সাদেক হোসেন খোকার “মুক্তিযুদ্ধের স্বর্ণালি দিনগুলো” প্রবন্ধে নিজেই লিখেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের কথা ভাবলেই নস্টালজিক মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। মন শুধু রণাঙ্গনের সাহসী সহযোদ্ধাদের হারানোর কারণেই ভারাক্রান্ত হয় না, তার চেয়েও বেশি হয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন-চেতনার দুর্দশা দেখে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা স্বপ্ন যাই বলি না কেন সেটা শুধু একটি ভূখণ্ডের স্বাধীনতা নয়, একটি সার্বিক মুক্তিই ছিল এ মহান যুদ্ধের মূল স্প্রিন্ট। সে কারণেই এর নাম হয়েছিল ‘মুক্তিযুদ্ধ’। মূলত বৃটিশ বেনিয়াদের রেখে যাওয়া সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও মানবিক সমাজ গঠনই ছিল স্বপ্ন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এ জাতির একটি সামষ্টিক মুক্তির লক্ষ্য থেকে। তবুও বলবো, জাতীয় মুক্তি না এলেও একটি স্বাধীন দেশ তো আমরা পেয়েছি। যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা দেশকে গড়ে তোলার কথা ভাবতে পারছি, স্বপ্ন দেখতে পারছি সুন্দর আগামীর।
সাদেক হোসেন ১৯৫২ সালের ১২ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তার দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি সরাসরি নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২৯ নভেম্বর ২০১১ পর্যন্ত মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন। কিডনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালের মে মাসে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান সাদেক হোসেন খোকা। তারপর থেকে গত সাড়ে পাঁচ বছর যাবৎ থাকছেন নিউ ইয়র্ক সিটির ইস্ট এলমহার্স্ট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়। সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ইসমত হোসেন।