সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ব্যাংক-বীমা | ব্রেকিং নিউজ » ব্যাংকে ব্যাংকে অভিযান শিগগিরই
ব্যাংকে ব্যাংকে অভিযান শিগগিরই
পক্বেষকাল ডেস্ক-রি ব্যাংকের মালিকরা ৯-৬ সুদহার বাস্তবায়নে সরকারকে যে প্রতিশ্রুত দিয়েছিলেন সেটি খতিয়ে দেখতে ব্যাংকগুলোতে সরেজমিন অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম ধাপে নমুনা ভিত্তিতে ৬ শতাংশ সুদের সরকারি আমানতের সুবিধাভোগী ব্যাংকগুলোর শাখায় অভিযান চালানো হবে। সরকারের প্রতিশ্রুতি রেটে আমানত পেয়েছে, কিন্তু ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়েছে কি না সেটিই যাচাই-বাছাই করে দেখবে পরিদর্শকদল। শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১ ও ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪-কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৯-৬ সুদহার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকেই এসেছিল। ফলে এটি বাস্তবায়নে তাদেরই আন্তরিকতা দেখাতে হবে। এটাও ঠিক, ৬ শতাংশ সুদে আমানত না পেলে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ কঠিন। এর পরও সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়ন করেছে বলে আমরা জেনেছি। তবে যারা ৬ শতাংশ সুদে আমানত পেয়ে এখনো ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়ন করেনি, তাদের বিষয়ে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসেও দেশের ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ৩৭টিরও গড় ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। এর মধ্যে ৩০ ব্যাংকেরই গড় ঋণের সুদহার দুই অঙ্কের ঘরে। অনেক ব্যাংকেরই ঋণের সুদহার ১৬ থেকে ২০ শতাংশে উঠেছে। ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকের মালিকরা গত বছর সরকারের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি সুবিধা আদায় করেন। এর মধ্যে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত নগদ জমা বা সিআরআর সংরক্ষণের হার কমানো এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি ধারের নীতিনির্ধারণী ব্যবস্থা রেপোর সুদহার কমানো হয়। এসব সুবিধা নিয়ে গত বছরের জুন মাসে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেন এবং একই বছরের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা জানানো হয়। নিজেরা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও ঋণের সুদহার এক অঙ্কে না নামানোর কারণ হিসেবে বিভিন্ন সময় ব্যাংকের এমডিরা দাবি করে আসছেন যে তাঁরা ৬ শতাংশ সুদে আমানত পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের এমডি এম রিয়াজুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটা বিষয় কিন্তু সবার জানা দরকার। আমরা কিন্তু রপ্তানি খাতের চলতি মূলধন তহবিল ৭ শতাংশ সুদেই দিচ্ছি। কৃষিঋণ বিতরণ করছি ৯ শতাংশে, নারী উদ্যোক্তাদের ১০ শতাংশে। এর বাইরেও অনেক গ্রাহককে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছি। তবে শতভাগ করতে আমাদের একটু সময় লাগছে। কারণ আমরা ৬ শতাংশ সুদে আমানত পাচ্ছি না। এমনকি সরকারি আমানতও ৬ শতাংশে পাচ্ছি না। আমরা যদি ৬ শতাংশে আমানত পাই, তবে সব ঋণের সুদই ৯ শতাংশে নিয়ে আসতে পারব।’
জানা যায়, ব্যাংকগুলোর ৬ শতাংশ সুদে সরকারি আমানত পাওয়া নিশ্চিত করার মাধ্যমে ৯ শতাংশ ঋণের সুদ বাস্তবায়নে গত ২০ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, সরকারি সংস্থাগুলোর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) তহবিলের আওতায় সরকার থেকে পাওয়া অর্থ এবং সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব তহবিলের অর্থ সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে ব্যাংকে আমানত রাখতে হবে। এর মধ্যে যেসব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান গত বছরে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে কেবল ওই সব প্রতিষ্ঠানই এই আমানত পাবে। যারা ঋণের সুদের হার ওই সময়ের মধ্যে ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে তারা এই আমানত পাবে না। এরপর ২৩ মে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ৬ শতাংশ সুদের সরকারি আমানত নিয়েও অনেক ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন করছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম ধাপে নমুনা ভিত্তিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত রাখা আছে এমন ১২ থেকে ১৬টি ব্যাংকের শাখায় পরিদর্শন করা হবে। এই পরিদর্শনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকেও পরিদর্শন চালানো হবে। সূত্র-কালের কণ্ঠ