জনগণের নিরাপত্তার জন্য সবই করব: প্রধানমন্ত্রী
পক্ষকাল প্রতিবেদক: ‘বাংলার মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় যা যা করণীয় তাই করব’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ঠেকাতে প্রয়োজনে সবকিছু করা হবে।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষমতায় আসতে না পেরে জামায়াতের প্ররোচনায় বিএনপি দেশে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘উনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারেননি। এবার তিনি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গী আন্দোলনে নেমেছেন। উনি জনগণের নেত্রী হতে পারেননি। উনি জঙ্গীদের নেত্রী।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। এ কারণে বিএনপি নেত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াত নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়নি। নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলেই বিএনপি নেত্রী ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেননি। পরাজয় হবে জেনে তিনি জামায়াতকে ছাড়া নির্বাচন করতে চাননি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী এখন জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দেশে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছেন।’
চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জানেন তিনি দুর্নীতির রাণী, জঙ্গীবাদের রাণী, তার কথায় কেউ মাঠে নামবে না।’
হরতালে যারা নাশকতা করে, জ্বালাও-পোড়াও করে তাদের রুখে দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি কোথাও নাশকতা করতে চাই তাহলে তাদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিন। নাশকতা রুখতে যা করা লাগে আমরা তাই করব।’
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। হাওয়া ভবন তৈরি করে দেশে লুটপাট চালায়।’
তিনি বলেন, ‘জেনারেল জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জাতির জনকের দেওয়া সংবিধান স্থগিত করে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে দিয়েছিল।’
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনার সোমবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তার বক্তব্য শুরু করেন। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি মঞ্চে ওঠেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, শেখ সেলিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার, কৃষক লীগের সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন্নেছা মোশাররফ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার বক্তব্য রাখেন।
তারা বিএনপির প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তাদের সহিংস আন্দোলন প্রতিহত করা হবে। রাজপথে থেকে তাদের মোকাবেলা করা হবে। দেশের মাটিতে বিএনপি-জামায়াতের কোনো সহিংস কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
সমাবেশ শুরুর আগে সোহরাওয়ার্দীর প্রবেশ পথ সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা যায়।
সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন। তাদের মিছিলের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা যায়। হরতাল আর অবরোধের মধ্যে গাড়ির স্বল্পতায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এর আগে, সোমবার সকালে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। দলটির দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এমন দাবি করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক আদেশে সোমবার সকালে ঢাকায় সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। ডিএমপির ওয়েবসাইটে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।