বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » বাদলের মৃত্যুতে যেন ‘আবারো পিতৃহারা’ হলেন নওফেল
বাদলের মৃত্যুতে যেন ‘আবারো পিতৃহারা’ হলেন নওফেল
পক্ষকাল সংবাদ-
আজ সকালে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কার্যকরী সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল। তার মৃত্যু নাড়া দিয়েছে রাজনৈতিক-সামাজিক মহলে। ইতোমধ্যে তাকে নিয়ে ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরীর ছেলে নওফেল। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মহিউদ্দিনের বিশ্বস্ত ছিলেন বাদল। দু’জন ভিন্ন দলের রাজনীতি করলেও তাদের মধ্যে অসাধারণ বন্ধুত্ব ছিলো। উভয় পরিবারের ছিলো নিবিড় যোগাযোগ।
বাদলের মৃত্যুসংবাদে ভেঙে পড়েছেন মহিউদ্দিনপুত্র নওফেল। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে পেইজে দেয়া স্ট্যাসে তিনি ‘আবারও পিতৃহারা হলাম’ বলেও মন্তব্য করেন। মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের স্ট্যাটাসটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
‘মাঈনুদ্দিন খান বাদল। বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় নেতা, অনলবর্ষী বক্তা, সংসদ সদস্য, বীর চট্টলার গৌরব, আরো অনেক কিছুতেই তাকে সম্বোধন করা যায়। না ফেরার দেশে তিনি আজ থেকে থাকবেন। ইন্না-লিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাইহে রাজিউন। মনে হচ্ছে যেনো আবারো পিতৃহারা হলাম। দুবছর আগে হঠাৎ স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়েছিলেন যখন, তখন তার বন্ধু মহিউদ্দিন চৌধুরীও গুরুতরভাবে অসুস্থ, হাসপাতালে। খুব আফসোস করতেন বন্ধুকে দেখে যেতে পারেননাই। অশ্রুসজল নয়নে স্মরণ করতেন। আজ থেকে আমরা তাকে স্মরণ করবো। চট্টগ্রামের স্বার্থে, মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থে, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে কোথায় ছিলোনা তার গর্জন? প্রথম তার সাথে আমার পরিচয় শৈশবে। এরশাদের দোর্দণ্ড শাসনের সময়। তৎকালীন পিজি হাসপাতাল, আজকের বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের রাজবন্দীদের কক্ষে। আমার বাবার প্রিজন সেলের সহবন্দী ছিলেন। এরশাদের সাথে আপস করে মন্ত্রী হতে পারতেন, কিন্তু বেছে নিয়েছিলেন বন্দী জীবন। আমাকে সমাজতন্ত্র শেখাতেন, দেখতেও ছিলেন স্টালিনের মত, ইম্পোজিং ব্যক্তিত্ব। আমার বাবার সাথে হাস্যরস আর গভীর রাজনৈতিক আলোচনায় মগ্ন থাকতেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত তার কাছ থেকে শুনতাম। পরবর্তীতে যখনই দেখা হতো, প্রতিবার তার কাছ থেকে শিখেছি। রাজনৈতিক আলোচনা যে শুধুই পদবির আর ক্ষমতার রাজনীতি নয় এবং রাষ্ট্রনীতি, আদর্শ, উন্নয়ন, এসবই হচ্ছে রাজনীতির মূল আলোচনা, বারবার তার সান্নিধ্যে এসে তা অনুভব করেছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে, তার সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে, সেই শৈশব থেকে দেখেছি অবিচল দৃঢ়তার সাথে তাকে বলতে। তিনি আর আমাদের মাঝে নাই। বাংলাদেশের রাজনীতি আরো একজন বিরল প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ কে হারালো, এক অপূরণীয় ক্ষতি। জাতীয় সংসদ আর জাতীয় রাজনীতি, হয়তোবা এই সিংহের গর্জন আর শুনবেনা, কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ, আদর্শিক রাজনীতির এই সিংহ পুরুষকে আজীবন স্মরণ করবেন। বেঁচে থাকবেন আমাদের প্রিয় মাঈনুদ্দিন খান বাদল, আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়।’
উল্লেখ্য, আজ ৭ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মঈন উদ্দীন খান বাদল। চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে এ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। বর্তমানে তার মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।