বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » জেলার খবর | রাজনীতি » ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও নদী দখলদারের হাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
‘অনুপ্রবেশকারী’ ও নদী দখলদারের হাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
মহেশখালী -আগামী ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছেন বিতর্কিত প্রার্থী মো: আব্দুল খালেক। মনোনয়নপ্রাপ্তীর খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন প্রার্থী নিজেই।
আওয়ামী লীগের চলমান দলীয় শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই দলে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত বিএনপির সাবেক এ নেতাকে মনোনয়ন দিলো আওয়ামী লীগ। যার বিরুদ্ধে রয়েছে দূর্ণীতি, চাঁদাবাজীর অভিযোগ। রয়েছে নদী দখলের অভিযোগে মামলা। যদিও নদী দখলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের এক রায়ে।
তার মনোনয়ন প্রাপ্তিতে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, মো. আব্দুল খালেক ২০০৮ সাল পর্যন্তও এলাকায় বিএনপি নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কক্সবাজার জেলা কমিটির তালিকায় এখনো নাম আছে তার। মহেশখালী থানা বিএনপির সভাপতি ড. আব্দুল মোতালেব-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম এম.কমের কমিটির ২৮ নাম্বার সদস্য ছিলেন তিনি।
বর্তমানে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তিনি।
অভিযোগ আছে, ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে খালেক বনে যান মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এ সময় নিজের এলাকার পাশাপাশি কক্সবাজারে গড়ে তুলেছেন ক্ষমতার রাজত্ব। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব, আর মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত করেছেন তার সাম্রাজ্য। নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট। গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ।
মহেশখালী উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল করিম বলেন, “ক্ষমতা বদলের সাথে সাথে রূপ বদলে যায় খালেকের। একসময় তিনি বিএনপি’র রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।”
অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার আগের রাতে (৫ নভেম্বর) দলীয় সমর্থন পেতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মোটা অংকের টাকা বিতরণ করেছেন তিনি। এই নিয়ে ক্ষোভ ও শঙ্কা বিরাজ করছে তৃণমূল আওয়ামী লীগে।
মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক মেম্বার সাইদুল ইসলাম জানান, “গত ৬ নভেম্বর শাপলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জেলা ও উপজেলা নেতাদের উপস্থিতিতে একটি বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সভায় সবার সমর্থন পেতে গত রাতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে নেতাদের মোটা অংকের টাকা বিতরণ করেছেন আব্দুল খালেক।”
সাইদুলের দাবি, “এক সময় বিএনপির রাজনীতি করা আব্দুল খালেক সরকারী দল আওয়ামী লীগে নিজের ‘আখের গোছাতে’ ঢুকে পড়েছেন।”
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওসমান সরওয়ার বলেন, “এক সময় বিএনপি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন খালেক চেয়ারম্যান।তিনি এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।”
কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদী দখল করে পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করেছেন খালেক। প্যারাবন কেটা এবং নদী দখলের অভিযোগে আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তার ক্ষমতার দাপটে সাড়ে নয় বছরেও প্রস্তাবিত নদীবন্দর নির্মাণ করতে পারছে না বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রফতানি সহজ করতে ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বাঁকখালী (কস্তুরাঘাট) নৌবন্দর স্থাপনে গেজেট প্রকাশ করা হয়। কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটকে নদীবন্দর ঘোষণাপূর্বক বিআইডব্লিউটিএকে নদীবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করাসহ বন্দর সীমানাও নির্ধারণ করা হয়। কস্তুরাঘাট থেকে মহেশখালী চ্যানেল পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ের ১ হাজার ২০০ একর জায়গাজুড়ে এ নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে কক্সবাজারের সদর উপজেলা অংশে ৮২১ একর এবং মহেশখালী উপজেলা অংশে ৪৪৭ একর জমি রয়েছে। তবে সবটুকুই সরকারি খাসজমি। এরই আলোকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও কানুনগো এবং বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল শাখা কর্তৃক যৌথ জরিপ কাজ সম্পন্ন করে। নৌবন্দরের জমি হস্তান্তরের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে একাধিকবার চিঠিও দেয় বিআইডব্লিউটিএ। তবে এখন পর্যন্ত এ জমি বিআইডব্লিউটিএকে হস্তান্তর না করায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নৌবন্দর নির্মাণের কাজ।
যে স্থানটি ঘিরে সরকার নদীবন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেয়, সে স্থানটিতে চলছে আব্দুল খালেকসহ প্রভাবশালীদের দখলের মহোৎসব। বিআইডব্লিউটিএ ৫১ জন প্রভাবশালী দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে। এ তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী অনেক রাজনৈতিক নেতারাও।
যদিও নদী দখলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের এক রায়ে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আব্দুল খালেক বলেন, “যে জমিতে পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করা হয়েছে, এটি দখল করা নয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলাও রয়েছে।”
সম্ভাব্য জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে যে স্থান ঘিরে নদীবন্দর হওয়ার কথা, সে স্থানে বেশকিছু দখলদার রয়েছে। যে কারণে জমি বুঝিয়ে দিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে সংকটে পড়বে নদী।
তার মনোনয়নপ্রাপ্তিতে স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকরা বলছেন, “অনুবেশকারীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নয় বরং অনেকেই এখন গা বাঁচাতে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছে। যারা সুযোগ বুঝে রং পাল্টাতে পারে। অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা যা-ই হোক, ওরা কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে এটা উদ্বেগজনক। কারণ জামায়াত ও বিএনপির জামায়াতপন্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রবেশ করে। কারণ তারা বাইরে থেকে কিছু করতে পারেনি, এখন ভেতরে থেকে কিছু করতে চায়।”
প্রসঙ্গত, ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১৭ নভেম্বর রোববার দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র বাছাই, ২৪ নভেম্বর রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন, ২৫ নভেম্বর সোমবার প্রতীক বরাদ্দ এবং ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহন