এলজিইডি’তে পিতা-পুত্রের হরিলুট!
পক্ষকাল প্রতিনিধিঃ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি’র) বিতর্কিত ও দূর্নীতিবাজ প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠেছে। খোদ এলজিইডি’র স্বাধীনতার পক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে প্রধান প্রকৌশলী ও তার ছেলে জুবায়ের হোসেনের স্বজনপ্রীতি, লুটপাটের অভিযোগ তুলে ধরেন।
এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান ও তার পুত্র জুবায়ের হোসেন এলজিইডি ভবনে গড়ে তুলেছেন রাম রাজত্ব। ছেলেকে ব্যবসায়ীক সুবিধা দিতে এলজিইডি ভবনকে দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন। প্রধান প্রকৌশলী’র ছেলে জুবায়ের হোসেন এলজিইডিতে দাঁপিয়ে বেড়ান। তার ক্ষমতার কাছে অসহায় এলজিইডি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীগণ, সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না। সে তার বাবার পদকে ব্যবহার করে অন্যায় ভাবে বিভিন্ন জেলার প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কারসাজির মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়ে গত ১৬-১৭ ও ১৭-১৮ দুই অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এহেন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন ভুক্তভোগী প্রকৌশলীবৃন্দ।
দৈনিক রাজনীতি থেকে তাদেরকে প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কর্মকর্তা বলেন, তাদের পিতা পুত্রের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ অধিনস্ত কর্মকর্তা কর্মচারী।তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেন না, কেননা কেউ মুখ খুললেই তাকে শাস্তিমূলক বদলি হতে হয়।
দৈনিক রাজনীতির অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান প্রকৌশলীর ছেলে জুবায়ের হোসেন কোন ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা আর্কিটেক বিষয় নিয়ে পড়েননি কিন্তু তাকে সরকারি এত কাজ কিভাবে দেয়া হচ্ছে তা জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাকে এত কাজ দেয়া মানেই দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কোটি টাকা আত্বসাতের কৌশল মাত্র।
প্রধান প্রকৌশলী’র পুত্র জুবায়ের হোসেন এর প্রতিষ্ঠান সিভিল টেক ডেভেলপমেন্ট লিঃ কে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে টেন্ডার ছাড়াই বিভিন্ন কাজ প্রদান করেছেন।
প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান এলজিইডি সদর দপ্তরের ডিজাইন ইউনিটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন কালে ইউনিটের ডিজাইনের কাজ তার পুত্র জুবায়ের হোসেনের মালিকানাধীন ডিজাইন ফার্ম ‘ডিজাইন প্রেসক্রিপশন লিঃ এর মাধ্যমে ডিজাইনের কাজ করান এবং তার পুত্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিভিল টেক ডেভেলপমেন্ট লিঃ এর মাধ্যমে এলজিইডি’র টেন্ডারকৃত সকল ভবন এবং ব্রিজের পাইলের পিআইটি টেষ্টের কাজ করান।
এ ছাড়া তিনি বাস্তবায়ন ও প্রাথমিক শিক্ষা ইউনিটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী’র দায়িত্ব থাকা কালিন এলজিইডির বাস্তবায়নকৃত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সকল স্থাপনার মাটি টেস্ট ও পরিস্কারের কাজ তার পুত্র জুবায়ের হোসেনের ফার্ম ‘সয়েল এন্ড ফাউন্ডেশন লিঃ এর মাধ্যমে করিয়ে নেন। যা স্পষ্টতই দূর্নীতির মহোৎসব।
গত ৬ আগষ্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন ৭৮৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টপোগ্র্যাফিকাল সার্ভে এবং সয়েল টেস্ট করার কাজ প্রধান প্রকৌশলী তার ছেলে জুবায়ের হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিভিল টেক ডেভেলপমেন্ট লিঃ কে নিয়মবহির্ভূত ভাবে প্রদান করেন।
এলজিইডিতে সার্ভে কাজ করায় অভিজ্ঞ, এনলিস্টটেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বঞ্চিত করে সকল কাজই তার ছেলেকে দিয়েছেন। যার ফলে তার ছেলে এলজিইডি থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করেছে।
গোপন সূত্রে জানা যায়, প্রধান প্রকৌশলী’র পুত্র জোবায়ের হোসেন বিদেশ পালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জোবায়ের হোসেন এর বক্তব্য নেয়ার জন্য তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিভিল টেক ডেভেলপমেন্ট লিঃ এর নাম্বারে বার বার কল দিলেও কেউ রিসিভ করেননি।
প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমানের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে কল দিলে, ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন সাড়া দেননি।
সুত্র-রাজনীতি