শ্রমিকদের কর্মবিরতি, বন্ধ নৌযান চলাচল
পক্ষকাল সংবাদ-
নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির ফলে সারাদেশে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল ২৯ নভেম্বর, শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ১১ দফা দাবিতে এ কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। নৌযান শ্রমিকদের এ ধর্মঘটের ফলে ঢাকাসহ দেশের ৪৩টি রুটেই চলছে না কোনো ধরনের নৌযান।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের ধর্মঘট শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিটে শুরু হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ১১ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছি। লঞ্চ মালিকপক্ষ শুধু আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি। গত বুধবারও সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বসেছিলাম, কিন্তু আবারো আশ্বাস। তাই শ্রমিকরা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধর্মঘটে যাওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়ায় আমরা ধর্মঘট করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করেছিলাম, ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। মালিকপক্ষ বলেছিল, আমাদের দাবিদাওয়া পূরণ করে দেবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো দাবিদাওয়া পূরণ করেনি।’
গত বুধবার সচিবালয়ে ফেডারেশন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। সেই বৈঠকে নৌপরিবহন খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র এবং সার্ভিস বুক দেবেন মালিক- এমন সিদ্ধান্ত হয়। এটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না-তা নৌ পরিবহন অধিদপ্তর তদারকি করবে বলেও এসময় জানানো হয়।
এছাড়া এ খাতের শ্রমিকদের খাদ্যভাতা দেয়ার বিষয়ে বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নৌ পরিবহন শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং ওয়েলফেয়ার ফান্ড গঠনের বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের তাদের ৩০ নভেম্বর থেকে আহুত কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। শ্রমিকরা নেতারা অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেন মন্ত্রীকে।
পরে ২৮ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। ওইদিন শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়েও সভায়ও মিলিত হয় ফেডারেশন। সেখানে দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত পূর্ব ঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।
বাংলাদেশ জাহাজ শ্রমিক ফেডারেশনের ১৪ দফা ও নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।
দাবিগুলোর মধ্যে আছে -
• বাল্কহেডসহ সব নৌ-যানে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ। ২০১৬ সালের ঘোষিত গেজেট মোতাবেক কেরাণী, কেবিনবয় ও ইলেকট্রিশিয়ানসহ সব নৌ-শ্রমিককে বেতন প্রদান।
• ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস প্রদান ও হয়রানি বন্ধ। সব নৌ-শ্রমিককে মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান। এনড্রোস, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ। কর্মস্থলে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ।
• নৌ-শ্রমিককে মালিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক দিতে হবে। নৌ-শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নদীর নাব্যতা রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন। মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিরতণ, সনদ নবায়ন, পরিদর্শনসহ নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সব প্রকার অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ। চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দরে আউটারে চলাচলকারী শ্রমিকদের সি-এলাউন্স দিতে হবে।