মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » রাজনীতির প্রভাব মুক্ত করা হবে বুয়েট
রাজনীতির প্রভাব মুক্ত করা হবে বুয়েট
পক্ষকাল সংবাদ-
ছাত্র রাজনীতি করলে বা র্যাগিংয়ের কারণে কোনো ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। একই সাথে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন বুয়েট’র আইন কর্মকর্তা।
২ ডিসেম্বর, সোমবার রাতে বুয়েট’র ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান কর্তৃক স্বাক্ষরিত জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জারি করা নতুন নীতিমালায় বলা হয়, বুয়েটে কেউ সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি করলে সর্বোচ্চ সাজা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার। এছাড়াও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত থাকলে, রাজনৈতিক পদে থাকলে, রাজনীতি করতে কাউকে উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করলে অপরাধ সাপেক্ষে শাস্তি সতর্কতা, জরিমানা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কোনো মেয়াদে বহিষ্কার।
বিজ্ঞপ্তিতে র্যাগিংয়ের বিষয়ে বলা হয়, কোনো ছাত্রের মৃত্যুর শাস্তি বুয়েট থেকে বহিষ্কার ও থানায় মামলা দায়ের। কোনো ছাত্র গুরুতর শারীরিক ক্ষতি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হলেও অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে।
র্যাগিংয়ের বিষয়ে আরো বলা হয়, মৌখিক বা শারীরিক লাঞ্ছনা এবং সাময়িক মানসিক ক্ষতিসহ এ সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সতর্কতা, জরিমানা, হল থেকে চিরতরে বহিষ্কার বা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরত রাখা। এ ধরনের অপরাধীকে শিক্ষাজীবনে ফিরতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক করে দেয়া মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাউন্সেলিং করতে হবে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, এখন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার পালা। গত দুই মাস একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে। এতে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে বুয়েট’র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির সব কটি পূরণ হলো। এর আগে গত ২৭ নভেম্বর, বুধবার বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, তিন দফা দাবি পূরণ হলে ২৮ ডিসেম্বর থেকে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দিতে তারা প্রস্তুত আছেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পর থেকে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটানায় নিহত আবরারের বাবার দায়ের করা মামলায় গত ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ নভেম্বর বুয়েট’র শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, তিনটি দাবি বাস্তবায়ন হলে তারা একাডেমিক অসহযোগ থেকে সরে গিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর একটি ছিল অভিযোগপত্রে নাম আসা ছাত্রদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার। দাবি অনুযায়ী ২৬ জন শিক্ষার্থীকে আজীবন বা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ৬ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়।
তিন শর্তের আর দ্বিতীয়টি ছিল বুয়েটের আহসানউল্লাহ, সোহরাওয়ার্দী ও তিতুমীর হলে এর আগে ঘটে যাওয়া র্যাগিংয়ের ঘটনাগুলোতে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি। গত ২৮ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার বুয়েটের আহসানউল্লাহ ও সোহরাওয়ার্দী আবাসিক হলের ৯ ছাত্রকে হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রম ৪ থেকে ৭ টার্ম পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়। আহসানউল্লাহ হলের চার ছাত্রকে সতর্ক করা হয়। আর সোহরাওয়ার্দী হলের ১৭ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়।
শিক্ষার্থীদের তৃতীয় দাবিটি ছিল, সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়ন করে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করে বুয়েটের অধ্যাদেশে তা সংযোজন করা। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্য দিয়ে সেই দাবিটিও পূরণ হলো।