বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে নিবন্ধন না পেলে পদক্ষেপ-মতামত
অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে নিবন্ধন না পেলে পদক্ষেপ-মতামত
পুলক ঘটক-
সরকার দেশের অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে যাচ্ছে। তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে চাইলে আমার আপত্তি আছে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিবন্ধন শুরু হবে। যারা নিবন্ধন পাবে না, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এই শেষের বাক্যটি অর্থাৎ “পদক্ষেপ নেওয়া”র ব্যাপারে আমার আপত্তি আছে। যারা সরকারের কাছে নিবন্ধন নেবেনা তারা সরকারীভাবে ‘অনিবন্ধিত মিডিয়া’ হিসেবে থেকে যাবে।
তারা যদি তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে অন্যায় বা অসাধু কোনো কার্যকলাপ না করে, তারা যদি নিবন্ধিত না হওয়া সত্ত্বেও সংবাদ পরিবেশনের নীতি-নৈতিকতা মেনে কাজ করে যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কি আছে?
আপনি বলতে পারেন, নিবন্ধন না পেলে তারা সরকারের কাছ থেকে এই এই সুবিধাগুলো পাবেনা। শুধু নিবন্ধন নিলেই তারা সরকারের কাছে এসব সুবিধা পাবে।
সকল মিডিয়া বাংলাদেশ সরকারের কাছে নিবন্ধন নেবে এটা কি বাস্তব সম্মত? অনলাইন জগৎটি বিশ্বব্যাপি বিস্তৃত এবং সময়ের সঙ্গে ধাবমান।
কোনও একটি অনলাইন মিডিয়া যদি অন্য কোনও দেশে রেজিষ্ট্রেশনকৃত হয়, তাহলে সেই মিডিয়াকে আপনি বাংলাদেশের সংবাদ পরিবেশন করতে দেবেন না?
বিবিসি, সিএনএন, ভোয়া, রয়টার্স, এপি, এফপি, ডয়চেভেলে, রেডিও ফ্রি এশিয়া, বেনারনিউজসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদপোর্টালগুলোর ব্যাপারে কি ভাবছেন? ওগুলো কি বাংলাদেশে চলবে না? তাদের প্রতিনিধিরা কি এই দেশ থেকে সংবাদ পরিবেশনের কাজ করবে না?
পৃথিবীর সকল সংবাদপত্র, রেডিও, টিভি এবং তাদের ওয়েবপোর্টালকে বাংলাদেশে নতুন করে নিবন্ধন নিতে বাধ্য করবেন? এটা কি বাস্তব সম্মত? সেসব পোর্টাল যদি নিবন্ধন ছাড়াই বাংলাদেশে সম্প্রচারের সুযোগ পায়, তাহলে বাংলাদেশের অনিবন্ধিত মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কোন যুক্তিতে?
সরকার বরং নিবন্ধিত অনলাইন মিডিয়ার জন্য সরকারি বিজ্ঞাপনসহ কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করতে পারে - যে সুবিধা অনিবন্ধিত মিডিয়াগুলো পাবে না।
দ্বিতীয়ত: সরকারের কাছে নিবন্ধিত সকল সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে তাদের অনলাইন সংস্করণের জন্য আলাদাভাবে নিবন্ধন নেওয়ার জটিলতাটিও অকারণ। এসব প্রতিষ্ঠিত মিডিয়াকে অনলাইনে প্রচারের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য বিদ্যমান প্রকাশনা আইনেই নতুন ধারা সংযোজন করে তার আওতায় নিবন্ধিত হিসেবে গণ্য করা আবশ্যক।
বর্তমানে দেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংবাদ, তথ্য বা যেকোনো মতামত পরিবেশন এমনিতেই ঝুকিপূর্ণ। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত কোনও সংবাদের জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের (ডিফেমেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী) সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদন্ড হতে পারে। কিন্তু একই সংবাদ বা মন্তব্য পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সাংবাদিক বা সম্পাদকের ৪ থেকে ১০ বছর এমনকি যাবজ্জিবন কারাদন্ডের বিধান করা হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে।
পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশনের দায়ে কোনও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিধান বর্তমান সরকার আমলেই তুলে দেওয়া হয়েছে। অথচ একই সংবাদ কোনও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ হলে আপনাকে/আমাকে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাবে; জামিন হবে না - এরকম স্ববিরোধী আইনি ব্যবস্থার মধ্যে আমাদের চলতে হচ্ছে।
সুতরাং অনলাইন মিডিয়ায় কাজ করা ইতোমধ্যেই আইনের মাধ্যমে শৃঙ্খলিত। এরপর আবার রেজিষ্ট্রেশন না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা মরার উপর খাড়ার ঘা আরকি।