শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Daily Pokkhokal
মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » খিরায় সচ্ছলতা গোলাপের চরের কৃষকদের
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » খিরায় সচ্ছলতা গোলাপের চরের কৃষকদের
৬০১ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

খিরায় সচ্ছলতা গোলাপের চরের কৃষকদের

---
শাহাদাত হোসেন সাকু, দাউদকান্দি থেকে :
শীত আসলেই দৃশ্যপট পাল্টে যায় গোমতী নদীর। মাত্র দুই মাস আগেও যেখানে ছিল থৈ থৈ পানি। নদীর বুক চলতো লঞ্চ, ষ্টিমার, কারফিউসহ ইঞ্জিন চালিত টলার। সেখানে নদীর বুকে তাকালে বিশ্বাস হবে না যে এখানে পানি ছিল। এর বুকে এখন থৈ থৈ পানির স্থলে সবুজ শাক সবজির সমাহার। গোমতীর বুকে চরপড়া বিশাল বালুভূমিতে খিরাসহ নানান ধরনের সবজির চাষ করেছে স্থানীয় কৃষকরা। এই বালুভূমির নাম গোলাপের চর। ভোর হতে না হতেই পরিবারের বড়দের সাথে ছোটরাও ছুটে গোলাপের চরে খিরা তুলতে। কারণ দুপুরের মধ্যেই যে পাইকারের হাতে খিরা তুলে দিতে হবে। না হয় খীরায় পচন ধরারও সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে সঠিক মূল্যও হারানোর ভয় থাকে তাদের। প্রতি দুই থেকে তিন দিন অন্তর অন্তর কৃষকরা জমি থেকে খিরা সংগ্রহ করে। এবং তা পাইকরা কিনে নিয়ে বিভিন্ন জেলায় সরর্বরাহ করে। প্রাকৃতির অনূকুল অবস্থা, পোকামাকড়ের আক্রমন ও রোগ বালাই তেমন না থাকায় এ বছর খিরার বেশ ভালো ফলন হয়েছে। খিরার সবুজ হাসিতে মূখরীত গোলাপের চর। এ হাসি এনে দিয়েছে চরের কয়েকশ পরিবারে সচ্ছলতার হাসি। এর আয় থেকে চলছে পরিবারের ভরন পোষনসহ সন্তানদের লেখাপড়া।
জানা যায়, এলাকাটি বছরে প্রায় ছয় মাস পানি বন্দী থাকে। বাকি সময়টুকুতে সোনালী ফসল হাসে। চরে বসবাসরতদের বেশিরভাগ অংশই কৃষি ও মৎস্যজীবি। বর্ষা মৌসুমে প্রায় সকলেই মাছ ধরার কাজ করলেও। শীত মৌসুমে গোলাপের চরে চাষ করে বিভিন্ন সবজীর। তার মধ্যে খিরা, মিষ্টি কুমড়া, চালি কুমড়া. ওস্তা, কড়লা, ঢেঁড়শ, পুইশাঁক, লালশাঁক এবং গোল আলু, মিষ্টি আলু অন্যতম। বর্তমানে নদীর বুকে বসবাসরতদের অধিকাংশই গোলাপের চর নিরর্বর। কেননা তাদের পূর্বপুরুষরাও ছিল এ চরের কৃষক। উল্লেখ্য যে, প্রায় দুই শত বছর আগে থেকে এখানে খিরা চাষ চলে আসছে। এখানকার মাটি খিরা চাষের জন্য উত্তম। গোলাপের চরে প্রায় এক হাজার বিঘা জমি রয়েছে। এসকল জমিতে মালিক নিজে আবার কর্তন নিয়েও অনেকে খিরা চাষ করে। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গোমতী নদীর বুকে চরপড়া এলাকাটির নাম গোলাপের চর।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের গোলাপেরচর, চেঙ্গাকান্দী, হাসানপুর, কদমতুলী, বাহেরচর, দড়িগাঁও, গঙ্গাপ্রসাদ, গাজীপুর, হাসনাবাদ, চরচারুয়া, গৌরীপুর, টামটা, জিংলাতুলী, জুরানপুর, গোয়ালমারী, সুন্দলপুরসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের ৬০৮ হেক্টর জমিতে  খিরা চাষ করা হয়। যা গতবছরের চেয়ে বেশী। এবছর এক বিঘা জমিতে খিরা চাষ করতে কৃষকের খরর্চ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। খিরার ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরা বেশ প্রফুল্লিত। শেষ মৌসুম পর্যন্ত তারা আশা করছে। প্রতি বিঘা জমিতে খিরা বিক্রি হবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এখন জমি থেকে পুরোধমে খিরা বিক্রি চলছে। প্রতি তিন দিন অন্তর অন্তর কৃষকরা পাইকারদের নিকট দেড় থেকে দুই মন প্রতিবস্তা খিরা ৫০০শ থেকে ৬০০শ টাকা পরিমানে বিক্রি করছে। পাইকরা গোলাপের চরের খিরা বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছে।
সরোজমিনে গেলাপের চরে গিয়ে দেখা মিলে কৃষক মো: আরশাদ মিয়ার সাথে বয়স তার সত্তোর পেরিয়েছে তিনি  বলেন, আমাগো বাব-দাদারাও এই চরে খিরা চাষ করছে। আমরাও করতাছি। আর এগুলো করেই আমাগো সংসারন চলে। এবছর খিরা জমিনে বেশি হইছে। সঠিক মূল্য পাচ্ছিন্না। গত বছরের চাইতেও এবছর খিরার দাম কম।
এমন অভিযোগ থাকলেও হাসির কমতি নেই তাদের চেহারায়। কারন এসবুজ ফসলের আয় থেকে চলছে বছরের পর বছরধরে পরিবারের ভরন পোষন। কয়েকশ পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ একমাত্র কর্মস্থল এ চর। এখানকার শাক সবজি এনে দিয়েছে তাদের ঘরে ঘরে সচ্ছলতার হাসি। দিন দিন পাচ্ছে আধুনিকতার ছোয়া। সন্তানরা পড়ালেখা করছে স্কুল কলেজে। সরকারী বা কোন প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা পেলে কৃষকরা সবজি চাষে  আরো বেশি উপকৃত হবে বলে এমন টাই আশা করছেন গোমতীর বুকে চর পড়া গোলাপের চরে বসবাসরত কৃষকরা ।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)