রবিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » » পেট্রোল বোমা তৈরি ও নিক্ষেপকারীদের হাত পুড়িয়ে দেয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী
পেট্রোল বোমা তৈরি ও নিক্ষেপকারীদের হাত পুড়িয়ে দেয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৫ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আবারো কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যারা পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মানুষ পোড়াচ্ছে, তাদের হাত পুড়িয়ে দিলে তারা বুঝবে পোড়ার কি যন্ত্রণা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের পেট্রোল বোমায় একজন অন্তঃস্বত্ত্বা মায়ের গর্ভেই তার সন্তান মারা গেছে একথা শুনে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। যারা বোমা বানায় ও তা ছুঁড়ে মারে, গ্রেফতারের পর তাদের হাত পুড়িয়ে দেয়া উচিত যেন তারা পোড়ার যন্ত্রণা বুঝতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক আঁতেল আমার কথার সমালোচনা করবেন তাদেরকে বলছি, বার্ণ ইউনিটে (হাসপাতাল) গিয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্রের সন্ত্রাসীদের নৃশংসতায় আক্রান্তদের কান্না ও দুর্ভোগ দেখে আসুন।
তিনি আজ বিকেলে সেগুনবাগিচায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতরের (এনএসআই) ২০ তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণকালে একথা বলেন।
বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা প্রথম এনএসআই সদর দফতর পরিদর্শন করেন।
এনএসআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শামসুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন। এসময় মঞ্চে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদক পাচার ও চোরাকারবারীর মতো সমাজ বিরোধী কার্যক্রম রোধে এনএসআই সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশের মাটিতে স্থান হবে না।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের স্থান হবে না এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর জন্য আমরা আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেবো না।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনএসআই সদস্যরা সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ‘এ ধরনের সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে আপনাদের কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বিএনপি-জামায়াতের বিগত সরকার সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তারা নিজেরা নিজেদের জন্য কূপ খনন করছে।
এটি প্রমাণিত যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষতির জন্য জঙ্গিদের আশ্রয় ও অস্ত্র সরবরাহ দিলে দেশকে এর জন্য মূল্য দিতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। এ অঞ্চলে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে, তা সত্ত্বেও একটি মহল দেশে হীন খেলায় মেতে আছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চায় এবং সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায় ?
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের উৎখাতের মাধ্যমে তাঁর সরকার বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ‘এই নীতি গ্রহণ করায় দেশে গত ৬ বছর শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় ছিলো।’
বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বুঝতে পারছেন না তারা কোন ইস্যুতে আন্দোলন করছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ একটি অনুকরনীয় আদর্শ ও সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এই পর্যায়ে, নেতিবাচক কর্মকান্ড দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক… আমি আন্দোলনের জন্য কোন ইস্যু খুঁজে পাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে কি দেখি? আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠনের কোন কারন আছে কি , আমরা কি ০৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে দেশ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছি, দেশকি অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত হয় নি, জঙ্গীবাদি কর্মকান্ড কি বন্ধ হয় নাই এবং জনগনের ক্রয় ক্ষমতা কি বৃদ্ধি পায়নি?’
‘আমরা ৬.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি ও দারিদ্রতার হার ২৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি এবং আশা করি আগামি চার বছরে এই হার ১০ শতাংশ কমবে। তাহলে কোথায় আমাদের ভুল?’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য কোন দেশই এত অল্প সময়ে এ ধরনের অগ্রগতি লাভ করে নি।
বিএনপি’র সাথে সংলাপের ব্যাপারে কারও কারও পরামর্শের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তিনি টেলিফোনে এ ধরনের সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপি নেত্রীর উত্তর ছিল নেতিবাচক।
তিনি বলেন, ‘আমার সাথে টেলিফোন আলাপে বেগম জিয়া কি ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা সবাই শুনেছেন। আমরা ওই ধরনের শব্দ ও ভাষা শুনতে আগ্রহি নই। এছাড়াও আমার ফোন ধরতে তাঁর ছয় ঘন্টা সময় লেগেছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার যে, একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে কি করবে না। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাদের মিত্র জামায়াত-ই-ইসলামী উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের কারনে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় বিএনপিও নির্বাচনে অংশগ্রহন করেনি’।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভকারী পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন একটি।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু যারা বাংলাদেশের অগ্রগতি চায় না তারা এখনও দেশ, জাতি ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা বোমা হামলা, পেট্রোল ঢেলে ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করা এবং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে তারা হাজার হাজার পবিত্র কোরান শরীফ পুড়িয়েছ, মসজিদ, মন্দিরে হামলা করেছে। তিনি বলেন, ‘তারা যানবাহন পুড়িয়ে, রেল লাইনের ফিশ প্লেট তুলে ফেলাসহ রাষ্ট্র বিরোধী কাজ করছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে তারা হামলা করেছে ৫৮২টি স্কুেল অগ্নিসংযোগ করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী একটি শক্তিশালী ও চৌকশ গোয়েন্দা সংস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব, নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষা এবং সস্ত্রাসের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিষয়টি অপরিহার্য।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্য অর্জনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি বিধি প্রণয়ণের মাধ্যমে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সে (এনএসআই) গঠন করেছিলেন এবং বর্তমানে যা সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা সংস্থায় পরিণত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের কাজটি এনএসআই বর্তমানে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করছে।
এছাড়া শেখ হাসিনা আরো বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং দেশের সীমান্তের বাইরের কৌশলগত নিরাপত্তা কর্মকা-ের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করাও এনএসআই’র দায়িত্ব।
তিনি বলেন, এনএসআই বিগত সময়ে জনগণের আস্থা হারিয়েছিল, কারণ অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল তারা এই সংস্থার সুনাম ক্ষুন্ন করে ১৯৭৫ সালে নৃশংসভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য এই সংস্থাকে ব্যবহার করেছিল।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এই সংস্থার হৃত গৌরব ফিরিয়ে এনেছে এবং জাতীয় পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদা সম্পন্ন সংস্থায় পরিণত করার লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন সংগ্রহসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে তাঁর সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এনএসআইয়ের সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং সংস্থার সদস্যদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে।
দেশের আটটি বিভাগীয় সদর দপ্তরের ন্যায় ৬৪ জেলা শহরে এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় কার্যালয়ের জন্য ভূমি বরাদ্দের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং চারটি জেলা শহরে ইতোমধ্যেই নিজস্ব ভবন তৈরি শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় এনএসআইয়ের ভুমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীর সদস্যরা আইন-শৃংখলায় নিয়োজিত অন্য বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ তলা ভবনের ভিত্তি প্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন।
গণপুর্ত অধিদপ্তর ও স্থাপত্য অধিদপ্তর যৌথভাবে ৮৭.৯৯ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের ১৩ জুন শেষ হওয়ার কথা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় এনএসআই’র জুনিয়র ফিল্ড অফিসার আব্দুস সাত্তারের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।