শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ » কালীগঞ্জে নির্যাতনের শিকার জেসমিন অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় র্মমান্তিক মৃত্যু
কালীগঞ্জে নির্যাতনের শিকার জেসমিন অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় র্মমান্তিক মৃত্যু
তৈয়বুর রহমান (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় নারী লিপ্সা ও সন্ত্রাসীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ায় এক সন্তানের জননী জেসমিন আক্তার (২৩) বিষপান করে । দীর্ঘদিন ৪ মাস ২৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শনিবার সকালে জেসমিন আক্তার তার বাপের বাড়িতে মারা যায়। দুপুরে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
গত ১০ আগষ্ট গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও এলাকায় বিয়েতে রাজি না হওয়ায় জেসমিনকে বেধরক মারধর করে লম্পট সন্ত্রাসী বিল্লাল ফরাজী (৪০)। পরে এই বিষয়টি জেসমিনের পরিবারের লোকজন স্থানীয় মেম্বারকে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বিল্লাল । পরে বিল্লাল জেসমিনের মার মোবাইলে ফোন দিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলে এবং তাদের হত্যাসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। তার মা লাউন্ড স্পিকারের মোবাইলে কথা বলায় পাশে থাকা জেসমিন সব কথা গুলো শুনতে পায়। পরে এর অপমনের কথা সইতে না পেরে রাগে ও ক্ষোভে জেসমিন ঘরে গিয়ে বিষাক্ত দ্রব্য সেবন করে মাটিতে লুটে পড়ে। পরে তার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রো নিয়ে আসে। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে এখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে ।
খুনী বিল্লাল
পরে ঢাকা নেওয়ার পথে তার শারীরিক অবস্থার বেগতিক হলে তাকে উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রের্ফাড করেন। সে খানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়ে আনুমানিক ২ মাস আগে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে তার পরিবারের লোকজন। প্রায় ২ মাস যাবত বাড়িতে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শনিবার সকালে নির্যাতনের স্বীকার এক সন্তানের জেসমিন আক্তরের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। এদিকে ঘটনাটি ঘটিয়ে প্রশাসনের চাপের মুখে পালিয়ে মালয়েশিয়া চলে যায় ওই সন্ত্রাসী বিল্লাল ।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল মোল্লা বলেন, জেসমিনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে জেসমিনের মা নুরজাহান আক্তার বিল্লাল ফরাজীকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নামে থানায় গত ১৭/৯/১৯ একটি মামলা দায়ের করেছিল।
অভিযোগে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিগত পাঁচ বছর পূবে জেসমিন আক্তারের বিয়ে হয়। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় এক বছরের মাথায় তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর পর থেকে জেসমিন তার এক মেয়ে সন্তান নুহা আক্তারকে নিয়ে তার বাপের বাড়ি বড়গাঁওয়ে থাকে।
নির্যাতিতার জেসমিনের মা মামলার বাদী নুরজাহান আক্তার বলেন, গত ১০ আগষ্ট বেলা তিনটার দিকে বড়গাঁও এলাকায় জনৈক কবির হোসেনের বাড়ির সামনে পাকা রাস্তায় জেসমিনকে একা পেয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সন্ত্রাসী বিল্লাল ফরাজী। এতে সে রাজি না হওয়ায় তাকে বিল্লাল চরথাপ্পর, কিলঘুষি ও লাথি মেরে আহত করে। বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার হেকিম ফরাজীকে অবগত করলে বিল্লাল ক্ষিপ্ত হয়ে তার মোবাইলে ফোন করে অশ্লীল ভাষায় কথাবার্তা বলে এবং ভয়ভীতি দেখায়। বিল্লালের কথাগুলো জেসমিন শুনে সে ঘরে গিয়ে বিষাক্ত দ্রব্য সেবন করে মাটিতে লুটে পড়ে।
স্থানীয় মেম্বার আব্দুল হেকিম ফরাজী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিল্লাল ফরাজী প্রকৃত খারাপ লোক। জেসমিন তার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বিল্লাল তাকে মারধর করে। পরে সে ওই পরিবারকে ভয়ভীতি দেখালে জেসমিন বিষপান করে।
উল্লোক্য যে, গত ৩১ জুলাই ওই নারী লিপ্সা বিল্লাল ফরাজী মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিষয়টি বিল্লালের পরিবারকে জানালে নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা-বাবাকে সে মারধর করার অভিযোগও রয়েছে।স্থানীয়ভাবে বিল্লাল ফরাজী প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলে না। এছাড়া বড়গাঁও এলাকার আলোচিত যুবলীগ কর্মী মামুন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সন্ত্রাসী বিল্লাল ফরাজী।