শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Daily Pokkhokal
রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ব্রেকিং নিউজ » ১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসী কর্মীর জন্য লেবার উইং মাত্র ২৯টি
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ব্রেকিং নিউজ » ১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসী কর্মীর জন্য লেবার উইং মাত্র ২৯টি
৩০০ বার পঠিত
রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসী কর্মীর জন্য লেবার উইং মাত্র ২৯টি

---

পক্ষকাল সংবাদ-

প্রবাসী কর্মীসরকারি হিসেব অনুযায়ী বিদেশে বাংলাদেশি কর্মী আছেন ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি। তাদের অধিকার, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব শ্রম কল্যাণ উইংয়ের। বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশি কর্মীরা গেলেও তাদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় ২৬টি দেশের বাংলাদেশ মিশনে শ্রম কল্যাণ উইং আছে মাত্র ২৯টি। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিআরব এবং ইতালিতে দুটি করে শ্রম কল্যাণ উইং আছে। কর্মীদের যথার্থ সেবা, সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিত করতে আরও শ্রম কল্যাণ উইং প্রয়োজন। একইসঙ্গে বিদ্যমান উইংগুলোর জনবলও বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। আর এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন,অর্থমন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শ্রম কল্যাণ উইংয়ে জনবল বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

শ্রম কল্যাণ উইং

শ্রম কল্যাণ উইং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণমূলক সেবা প্রদান করে। শ্রম উইংয়ের প্রধান দায়িত্ব প্রবাসী কর্মীদের অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়া। শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে অভিবাসী কর্মীদের কর্মপরিবেশ, সুবিধা ও সমস্যাগুলো সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ, অভিবাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে চলা মামলা পরিচালনায় আইনগত সহায়তা দেওয়া, বিদেশে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশি কর্মীদের বিবরণ সরকারের কাছে পাঠানো এবং কারাভোগকারী কর্মীদের আইনানুগ সহায়তা দেওয়া, যেসব অভিবাসী কর্মীর মৃত্যু হয়েছে তাদের মৃতদেহ দেশে পাঠানো, নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়, সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশি কর্মীর প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে সরকারকে নিয়মিত তথ্য দেওয়া, বিদেশে নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশে আটককৃত বা বিপদগ্রস্ত কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেওয়াসহ প্রভৃতি কাজ করে থাকে।

কর্মীদের গন্তব্য ১৬৮ দেশ

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশের কর্মীরা কাজ করতে যায়। ১৯৩টি দেশের মধ্যে ৫৮টি দেশে কূটনৈতিক সংযোগ রাখার জন্য বাংলাদেশের ৭৭টি মিশন রয়েছে, এর মধ্যে ৫৯টি পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস। কয়েকটি দেশে রয়েছে একাধিক মিশন। আর ১৩৫টি দেশে বাংলাদেশের কোনও কূটনৈতিক মিশন নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করতে যান এমন ১৬৮টি দেশের মধ্যে ১১০টি দেশে কোনও শ্রম কল্যাণ উইং নেই।

যেসব দেশে শ্রম কল্যাণ উইং আছে

বিশ্বের ২৬টি দেশে ২৯টি শ্রম কল্যাণ উইং আছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং ইতালিতে ২টি করে শ্রম কল্যাণ উইং আছে। এর বাইরে যেসব দেশে শ্রম কল্যাণ উইং আছে সেগুলো হলো— কাতার, লিবিয়া,ওমান, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরাক, জাপান, জর্ডান, ব্রুনাই, গ্রিস,অস্ট্রেলিয়া, মিশর, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, রাশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, মরিশাস, কুয়েত এবং লেবানন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শ্রম কল্যাণ উইংগুলোতে ৪৩ জন কূটনৈতিক মর্যাদার কর্মকর্তা এবং ১৪৫ জন সহায়ক কর্মকর্তা ও স্টাফ নিয়োজিত আছে। লেবার কাউন্সিলর একজন এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি একজন এই দুইজন মিলে মূলত একটি লেবার উইং পরিচালিত হয়ে থাকে। শ্রম কল্যাণ উইংগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং ও মূল্যায়নের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়ে থাকে।

লেবার উইংয়ে নেই পর্যাপ্ত নারী কর্মকর্তা

বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাওয়া নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব লেবার উইংয়ে আরও নারী কর্মকর্তার প্রয়োজন বলে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। ২০১৯ সালের অভিবাসনের গতি প্রকৃতি নিয়ে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯৭ হাজার ৪৩০ জন নারীশ্রমিক বিদেশ গেছেন। ডিসেম্বর মাসে নারী অভিবাসনের এই গতি অব্যাহত থাকলে ২০১৮ সালের তুলনায় এটি ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার কথা।

রামরুর প্রতিবেদন আরও বলছে, বর্তমানে ২৬টি দেশে ২৯টি শ্রম উইং কাজ করছে। এই উইংগুলোতে সর্বমোট ৩৯জন অ্যাটাশে কাজ করছেন। বাংলাদেশ থেকে নারী অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শ্রম বিভাগগুলোতে আরও অধিক হারে নারী সদস্য নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় ভাষাজ্ঞানের অভাব, দোভাষী এবং আইনি পরামর্শক নিয়োগের জন্য অপ্রতুল অর্থায়ন সেসব দেশে অভিবাসীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

রামরুর প্রোগ্রাম পরিচালক মেরিনা সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেসব দেশে নারী কর্মীরা অধিক হারে যাচ্ছেন সেসব দেশে আরও বেশি করে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। নারী কর্মীদের সঙ্গে চুক্তি হয় সাধারণত দুই বছরের জন্য। এই দুই বছর তারা যাতে স্বস্তিতে কাজ করতে পারেন, সেখানে কোনও অসুবিধা হলে যেন তাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক মেকানিজম থাকে। না হলে নারীদের জন্য অভিবাসন অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে লেবার উইং বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। না হলে কোন দেশে কতজন শ্রমিক আছে সেটার পারসেন্টেজ হিসাব বের করে লেবার উইং দেওয়া উচিত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে পরিমাণ কর্মী যায় সে পরিমাণ কর্মকর্তা আমাদের নেই। বিদেশে কর্মীদের অভিভাবক বলতে যে কিছু একটা আছে এই জায়গায় কাজ করার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেন তিনি।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬ লাখ ৪ হাজার ৬০ জন বাংলাদেশি কর্মী উপসাগরীয় ও অন্যান্য আরব দেশ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছে। ২০১৮ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে অভিবাসন করেছিল। ১৯৭৬ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ১ কোটি ২৮ লাখ ৩ হাজার ১৮৪ জন কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে অভিবাসন করেছে।

বিদেশে লেবার উইং বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, যেকোনও এক্সপেনশনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় না করতে থাকে। তবে, আমাদের প্রস্তাব দেওয়া আছে। আমরা মূলত ২৯টি লেবার উইংয়ের জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের ওয়েলফেয়ার বোর্ড আর মন্ত্রণালয় থেকে আমরা চেষ্টা করছি, ওখানে স্থানীয়ভাবে নিয়োগ করা যায় কিনা। যদি আমরা সেটা করতে পারি, তাহলে আশা করি অধিক সেবা দিতে পারবো। আপাতত এইটুকু উদ্যোগই আছে আমাদের।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)