মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ | জেলার খবর » মেহেরপুরে অবাধে চলছে পুকুর খনন ও বালু উত্তোলন
মেহেরপুরে অবাধে চলছে পুকুর খনন ও বালু উত্তোলন
মেহেরপুর প্রতিনিধি ঃ
মেহেরপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের একটি কৃষি প্রধান এলাকা। আবাদি জমির প্রায় সবই দুই ফসলি ও তিন ফসলি। ৭১৬.০৮ বর্গ কিঃমিঃ আয়তনের এ জেলার ৭০-৮০% মানুষের আয়ের উৎস কৃষি। স্বাধীনতার সূতিকাগার মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুর জেলা তিনটি উপজেলা ও দুইটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মোটজমি ৬০,১৮৩ হেক্টর, নীট ফসলী জমি ৬০,০২৪ হেক্টর। এক ফসলী জমি ৩,১৫৩হেক্টর, দুই ফসলী জমি ৩০,৯১৩ হেক্টর, তিন ফসলী জমি ২৫,৮৩৮ হেক্টর, তিনের অধিক ৩২০ হেক্টর। মোট ফসলী জমি ১,৪৩,১৭২ হেক্টর। উর্বর ও সমতল এলাকা হওয়ায় ধান, গম, ভ’ট্টা, সরিষা আলু, কচু, পেয়াজ, মরিচ, কলা ও সকল ধরনের শাক সব্জিসহ সুস্বাদু আম, লিচু, কাঠাল উৎপাদন হয়। এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে রপ্তানী করে অর্থ উপার্জন করে কৃষক। এজন্যই উর্বর জমি কৃষকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেলায় অধিকাংশ জলাবদ্ধ এলাকা গুলোতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করলেও বর্তমানে ৩ ফসলি জমিতেও পুকুর করছে প্রভাবশালীরা।
জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লংঘন করে এলাকার প্রভাবশালীরা নির্বিঘেœ ফসলি উর্বর কৃষি জমি নষ্ট করে ব্যাপক হারে পুকুর খনন করছে। মাঠের মাঝে পুকুর খনন করায় বর্ষা মৌসুমে মাঠে জলাবদ্ধতা হবে। ফলে এলাকার সাধারণ জমির মালিকেরা চরমভাবে হতাশ। ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার পর তা পরিবহনের জন্য পাকা ও কাঁচা সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটি বোঝাই ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তা গুলো ভেঙ্গে গিয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। আর সড়কগুলো নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ।
জেলার বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, আমাদের এই মাঠে বিভিন্ন ধরনের ফসল হয় কিন্তু প্রভাবশালী লোকজন পুকুর করার নামে ইট ভাটায় মাটি বিক্রয় করছে। গভীরভাবে মাটি কাটতে ব্যবহার করা হচ্ছে স্কেভেটর মেশিন এবং জমির সীমানা ঘেষে মাটি কাটার কারনে পাশের জমি ভেঙ্গে যাচ্ছে। জমি ভেঙ্গে পুকরের ভিতরে যওয়ার ফলে ঐ জমি মালিকও পুকুর করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকেই রাস্তার পাশের জমিতে রাস্তা ঘেষেই পুকুর কাটেছে ভেঙ্গে যাচ্ছে রাস্তা। কোথাও কোথাও দেখা গেছে মাঠের মাঝে প্রথমে গভীর পুকুর কাটা হয়েছে। পরবর্তীতে ঐ পুকুরে ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রয় করছে। ফলে আবাদি জমির নিচ থেকে বালি সরে গিয়ে জমি দেবে যাচ্ছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
সদরে বাড়িবাঁকা গ্রামের মাঠে আসকার আলী ২ বিঘা জমিতে পুকুর কেটেছেন তবে ধানি জমিতে শ্রেণী পরির্বতন করে পুকুর করার জন্য অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানেন না। তিনি বলে কোলা গ্রামের মিজা নামের একজন পুকুর কেটে দিয়েছে সেই জানে অনুমতি আছে কিনা।
একই গ্রামের রাজ্জাকের বাড়ির পাশে উচু জমি কেটে গভীর র্গত করে পুকুর করছে বর্ষা মৌসুমে পুকুরের পাশের বাশঝাড় উপড়ে যাবে সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, রাজ্জাকের জমির মাটি কেটে চঞ্চল মিয়ার ইট ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। তবে পুকুর করার অনুমতি পত্র দেখে কাটছেন কিনা জানতে চাইলে মাটি কাটা স্কেভেটর মেশিনের মালিক হুমায়ন কবীর জানান আমরা ঘন্টা চুক্তিতে মাটি কাটি গত বছর মেজিস্ট্রেট আমাদের জরিমানা করেছিলো তাই আমরা গাড়ির মালিকরা সমিতি করে জেলা প্রশাসকের এলআর ফান্ডে মোটা অংকের টাকা ( ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ শে মার্চ পালনের জন্য) ডোনেশন দিয়েই মাটি কাটি। তবে এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শরীফ উদ্দীন বলেছে পুকুর কারার অনুমতি আছে। তবে তিনি অনুমতির কাগজ দেখেননি বলে জানান। এরকম অপকৌশলে নির্বিঘেœ পুকুর কেটেই চলেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার সমতল ভূমি ও আশে পাশের ফসলি জমি।
এছাড়াও গাংনী উপজেলার আড়পাড়া, মহিষাখোলা, ধানখোলা, জালশুকা, শিশির পাড়া, চিৎলা, বাশবাড়িয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে চলছে ইট ভাটায় মাটি বিক্রয় করে পুকুর খনন।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বলেন, মেহেরপুর জেলার জমি খুবই উর্বর এখানে সকল ফসলই ভালো হয়। তবে কেনো পুকুর কাটছে তা বুঝতে পারছিনা। আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর কোন ইট ভাটা, স্কেভেটর মেশিন বা অবৈধ কোন কাজের জন্য কারো টাকা গ্রহন করিনি। জেলা প্রশাসন থেকে কোন ব্যাক্তিকে পুকুর খননের অনুমতি দেওয়া হয়নি। খুব শিঘ্রই অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।