শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ | রাজনীতি » ভারত সরকারের আগ্রাসী নীতি এবং সরকারেরনতজানু অবস্থানের কারণেই সীমান্ত হত্যাকান্ড
ভারত সরকারের আগ্রাসী নীতি এবং সরকারেরনতজানু অবস্থানের কারণেই সীমান্ত হত্যাকান্ড
পক্ষকাল সংবাদ-বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক একের পর এক অব্যাহতভাবে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার বিচারের দাবিতে এবং বাংলাদেশী শাসকদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রতিবাদে আজ ২৫ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ। বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় বর্ধিত পাঠচক্রের সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, ঢাকা মহানরগ বাসদ এর সদস্য সচিব জুলফিকার আলী, নগর বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন ও ইমরান হাবিব রুমন। সমাবেশের পর একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে কদম পোয়ারা ঘুরে তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন সেগুনবাগিচাসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ হত্যাকা- চালাচ্ছে। গত ২৫ দিনেই বাংলাদেশের ১৭ জন নাগরিককে সীমান্তে হত্যা করা হয়েছে। গত ১০ বছরে প্রায় তিন শতাধিক নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন হত্যাকা-েরই বিচার হয়নি। ২০১১ সালে কুড়িগ্রাম সীমান্তে বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যাকা-ের বিচারও আইনি প্রক্রিয়ায় ঝুলে আছে। এই হত্যাকা- এযাবৎকালের বিএসএফ কর্তৃক হত্যাকা-ের প্রথম বিচার প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশের শাসকদের পক্ষ থেকে ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো, যা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য খুবই লজ্জাজনক। আবার গত ২৩ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই দুই দেশের সম্পর্ক রাখি বন্ধনে আবদ্ধ। দেশবাসীর প্রশ্ন কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে কেমন বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়েছেন ভারত। বন্ধুত্বের সম্পর্কের নমুনা আমরা দেখি সীমান্তে অব্যাহত হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে। সীমান্তজুড়ে তিনদিকে কাঁটাতারের বেড়া, এক দিকে সমুদ্র উপকূলে রাডার দিয়ে রাখা, ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত রাখা, বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি দূরে উদ্যোগহীনতা ইত্যাদি থাকলেও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শাসকশ্রেণি ভারতের সমর্থনপুষ্ট হয়ে ক্ষমতার মসনদে আসীন থাকার জন্যই কখনো দেশ ও জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এ বিষয়গুলো নিয়ে কোন কথা বলে না। বরং দেশ ও জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের স্বার্থে একের পর এক চুক্তি করে যাচ্ছে। তিস্তার পানি না পেলেও ফেনী নদীর পানি দিয়ে আসতে তাদের কোন অসুবিধাই হয়নি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সীমান্তে একের পর এক এই হত্যাকা- ভারতীয় শাসকশ্রেণির সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী নীতিরই ফলাফল। গরু ব্যবসায়ী বা চোরাকারবারী দমনের জন্য ভারত এসব করছে দাবি করা হলেও, প্রথমত ব্যবসা বা বিনিময়তো এক পক্ষে হয় না, ভারতের লোকজনও যুক্ত এতে, কিন্তু নিজের দেশের চোরাকারবারীদের দমন না করে নির্বিচারে সীমান্ত থেকে ১০/২০ কিলোমিটার ভেতরে বিএসএফ কর্তৃক গুলি করে মানুষ হত্যা করা গণহত্যারই শামিল বলে মন্তব্য করেন নেতৃবৃন্দ। অথচ দুই দেশের আইনেই বলে, যদি কেউ চোরাচালানের সাথে যুক্ত থাকে তাহলে তাদের প্রচলিত আইনে গ্রেপ্তার ও বিচার করা, কিন্তু তা না করে গুলি করে মানুষ হত্যা করা অসাংবিধানিক ও মানবতা বিরোধী কাজ।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সীমান্ত হত্যার বিচার ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের জোর দাবি জানান এবং ভারতের আগ্রাসী নীতি এবং বাংলাদেশের শাসকদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহারের দাবিতে দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।