অবরোধ চলবে : খালেদা
পক্ষকাল প্রতিবেদক : খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের অবরোধ চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি ছাড়া আর কোনো কর্মসূচি আপাতত নেই বলেও জানান তিনি।
গত ৫ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ের ভিতরে গাড়িতে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর এই প্রথম প্রকাশ্যে এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন খালেদা জিয়া। মেরুন পাড়ের অফহোয়াইট শাড়ির উপর মেরুন রঙের শাল পরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন খালেদা জিয়া।
প্রথমে উপস্থিত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত ১৬ দিন ধরে আপনারা আমার এই অফিসের সামনে খোলা আকাশের নিচে তীব্র শীত, বৃষ্টি ও কুয়াশা উপেক্ষা করে রাস্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা পেশাগত কর্তব্য পালন করেছেন।’
পুলিশের পিপার স্প্রের বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন উল্লেখ করে বিএনপি-প্রধান বলেন, ‘আমাকে এখানে অবরুদ্ধ করে রাখার আগেই ক্ষমতাসীনরা সারা দেশকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছিল। ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল সকল যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে।’
গত ৫ জানুয়ারি সাংবাদিকদের পিড়াপিড়িতে অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিলেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, সাংবাদিকরা নয়, অবরোধ কর্মসূচি দিতে সরকার বাধ্য করেছে।
সমাবেশের অনুমতি পেলে আপনারা কী করবেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি কর্মসূচি চলছে। শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি ছাড়া আর কোনো কর্মসূচি নেই। পরবর্তী সময়ে অন্য যে সব কর্মসূচি আসবে তা আপনাদের জানানো হবে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘অতীতের ধারাবাহিকতায় গত এক বছর ধরে আমাদের এবং দেশবাসীর ন্যূনতম অধিকারগুলো কীভাবে হরণ করা হয়েছে। কীভাবে জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন, হামলা-মামলা চালানো হয়েছে। কেমন জঘন্য ও উস্কানিমূলক ভাষায় আমাদের ক্রমাগত আক্রমণ করা হয়েছে। তারপরও আমরা বার বার একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি।’
৭ দফা প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘তারা আমাদের আহ্বান ও প্রস্তাবকে তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দিয়ে অস্ত্রের ভাষায় সব দমিয়ে দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছে।’
জনগণের প্রতিবাদের নিয়মতান্ত্রিক সব পথ সরকার রুদ্ধ করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা বাধ্য হয়ে সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছি। অবরোধ কর্মসূচি চলছে, অবরোধ কর্মসূচি চলবে, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সারা দেশে নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কোনো সুযোগ না দিতে ক্ষমতাসীনরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সারা দেশে বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিরাট মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামছেন। সঙ্গে সঙ্গে মিছিলে গুলি চালানো হচ্ছে। কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরাও হামলা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সম্পর্কে দেশে-বিদেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনরা নাশকতা ও অন্তর্ঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশী প্রহরার মধ্যে নারী, শিশু, ছাত্রছাত্রীদের বহনকরী যানবাহনে পেট্রোলবোমা মেরে অনেক নি
রপরাধ মানুষকে হতাহত ও দগ্ধ করা হয়েছে। এই সব পৈশাচিক বর্বরতার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’
গান পাউডার ব্যবহারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত বলে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সহিংসতার জন্য বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের কর্মীরা দায়ী।’
বিএনপি ও ২০ দল মানুষ পুড়িয়ে অপতৎপরতায় বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা রাজনীতি করতে চাই না, কখনো করিনি। অতীতে যাত্রীবাসে গান পাউডার দিয়ে আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বোমা মেরে ও লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে মানুষ হত্যা এবং পুলিশ খুনের অপরাজনীতি আওয়ামী লীগই করেছে। আ
মাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এখনো তারাই সুপরিকল্পিতভাবে এ সব নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে।’
যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে বিভিন্ন জনপদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হচ্ছে-এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এ সব হত্যা-নির্যাতনের ঘটনার জড়িতদের আগামীতে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতীত নিরপেক্ষ ঐতিহ্য বহাল রেখে আইনসম্মতভাবে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
দলের নেতাকর্মীরা কেউ নিরাপদে বাসায় থাকতে পারে না উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘হত্যার উদ্দেশ্যে রিয়াজ রহমানের ওপর গুলি হয়েছে। তার গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। বিএনপি নেতা সাবিহউদ্দিনের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমাদের দলের অনেক সিনিয়র নেতার বাসা-অফিসে গুলি ও বোমা হামলা হয়েছে। আমাদের দলের অফিস অনেক জায়গায় পোড়ানো হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাসীরা’ অনেক জায়গায় অস্ত্র, বোমা ও গুলিসহ ধরা পড়ার পরও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তাদের প্রতি আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশের চলমান সংকট নিছক কোনো আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয়। এটি
রাজনৈতিক সংকট। এর রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি।’
সরকারের প্রতি উস্কানি, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের অপরাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিত করেন করে বলেন, জনগণের ভোট দেওয়ার যে অধিকার কেড়ে নিয়েছেন তা ফিরিয়ে দিন এবং অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিন।
কার্যালয়ে অবস্থান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এটা আমরা কার্যালয়। এখানে আমার কাজ আছে, আমি কাজ কবব। আমার কার্যালয়ের অবরোধ যখন তুলে নিয়েছে, আমার যখন যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারি, তখনই বুঝব অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গণি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জোনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বেগম সারোয়ারী রহমান, আসম হান্নান শাহ, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান। এ ছাড়া চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল উপস্থিত ছিলেন।