রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ | অর্থনীতি » প্রতারণা?/ সিইপিজেডের ক্যানপার্কসহ ১১ গার্মেন্টসের পণ্য ফেরত এলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে
প্রতারণা?/ সিইপিজেডের ক্যানপার্কসহ ১১ গার্মেন্টসের পণ্য ফেরত এলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে
পক্ষকাল ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘ভিএফ-কনটুর’ বাংলাদেশের ১১টি গার্মেন্টসের ২৬ লাখ ডলার (প্রায় ২৪ কোটি টাকা) মূল্যমানের রপ্তানি করা পণ্য ফেরত পাঠিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে পাঠানো পণ্যগুলো চলতি বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বন্দরে পণ্য পৌঁছলে ভিএফ-কনটুর তা গ্রহণ না করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই। সমঝোতা না হলে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পণ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে। এই ১১টি গার্মেন্টসের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অবস্থিত ‘ক্যানপার্ক’ও। বাংলাদেশি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো একে ‘প্রতারণা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি এএম চৌধুরী সেলিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমনিতেই গার্মেন্টস ব্যবসায়ের অবস্থা খারাপ। এটি এখন আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বায়ারের এই আচরণটি ঠিক নয়। সমস্ত শর্ত মেনেই পণ্য পাঠানো হয়েছে। জাহাজে দুর্ঘটনা ঘটলেও পণ্যের কোন ক্ষতি হয়নি। তবে দেনদরবার চলছে। বায়ার একটু পজিটিভ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসলেই সমস্যার সমাধান হবে।’
প্রতারণার শিকার পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে নাসা অ্যাপারেলস, এমএনসি অ্যাপারেলস, স্নোটেক্স, এনভয়, কেনপার্ক, সিমটেক্স, ডিএমসি, তারাশিমা, ফাউন্টেন, কটন ক্লাব, মেডলার গার্মেন্টসের সরবরাহ করা পণ্য দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ভিএফ-কনতুর। এর মধ্যে রয়েছে ২০০০ সালে চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) প্রতিষ্ঠিত ‘ক্যানপার্ক’ও।
গত বছরের ডিসেম্বরে পণ্যগুলো পাঠিয়েছিল এই ১১টি পোশাক কারখানা। পণ্যের মূল্য বাবদ ভিএফ-কনটুরের কাছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা প্রায় ২৬ লাখ ডলার। ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভিএফ-কনটুর গ্রহণ না করায় সেসব পণ্য এখন দেশে ফেরার পথে রয়েছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর কথা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন পোশাক প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এর ফলে তৈরি পোশাকের বাজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বাজারের তালিকায় নাম উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিয়ে অহেতুক নানা ঝামেলা করে। তারা ঠিকমতো বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাওনাও পরিশোধ করে না। বন্দরে পণ্য ফেলে রেখে অনৈতিকভাবে ডিসকাউন্ট আদায় করে নেয়। এভাবে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। আর এই কাজে সহযোগিতা করছে খোদ বাংলাদেশি শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভিএফ-কনটুরের কাছে পাওনা প্রায় ২৬ লাখ ডলারের মধ্যে নাসা গ্রুপের দুটি কারখানা নাসা অ্যাপারেলস ও এমএনসি অ্যাপারেলসের রফতানি বিলই ৯ লাখ ৯৮ হাজার ১১০ ডলার।
গত ৬ জানুয়ারি ওই ১১ প্রতিষ্ঠানের রফতানি পণ্যের চালান যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর আগে ৩ জানুয়ারি কানাডার পূর্ব উপকূলে হ্যাপাগ লয়েডের পণ্যবাহী জাহাজ ইয়ানতিয়ান এক্সপ্রেসে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জাহাজের মালিকপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। এর ফলে সময়মতো পণ্য পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে সব প্রক্রিয়া শেষে গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বন্দরে পণ্য পৌঁছলে ভিএফ-কনটুর তা গ্রহণ না করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর কথা। চালান সরবরাহে বিলম্বের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অবহিত করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, ‘ভিএফ-কনটুর’-এর বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সচেতনভাবেই প্রতারণা করছে। সব নিয়ম মেনেই সেখানে পণ্য পাঠিয়েছিল বাংলাদেশি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো। সব শর্ত মানার পরও ‘ভিএফ-কনটুর’ বাংলাদেশ থেকে পাঠানো রপ্তানি পণ্য ফেরত পাঠাচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ১২০ দিনের মধ্যে রফতানি পণ্যের বিপরীতে পাওনা অর্থ পাওয়ার কথা। কিন্তু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রপ্তানির টাকা পায়নি।
বিকেএমইএর পরিচালক চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী স্টিচ টোন অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব দাশ সুজয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বায়ার আমাদের পাওনা পরিশোধ করেনি। আমার প্রতিষ্ঠানেরও অনেক পাওনা বাকি আছে।’
চট্রগ্রাম প্রতিদিন