রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » » চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যেভাবে চলছে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যেভাবে চলছে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা
থার্মাল মেশিন নষ্ট, জ্বর মাপা হচ্ছে থার্মোমিটারে
পক্ষকাল ডেস্ক-
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিং মেশিনটি নষ্ট গত ৬ মাস ধরে। তাই ‘হ্যান্ডহেল্ড’ থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপা হচ্ছে যাত্রীদের। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জনে জনে মাপা হচ্ছে জ্বর। যাত্রীদের স্ক্রিনিং করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম।
চীনের উহান শহর থেকে ‘করোনা’ নামে এক নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সতর্কতা হিসেবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে গত ২০ জানুয়ারি।
বিমানবন্দর ঘুরে দেখা যায়, বিদেশফেরত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি থার্মাল স্ক্যানার (আর্চওয়ে বা দরজার চৌকাঠের মতো দেখতে একধরনের যন্ত্র, যাতে জ্বর মাপা হয়) থাকলেও সেটি ৬ মাস ধরে বিকল। আর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোনও থার্মাল স্ক্যানারই নেই। এখানে ‘হ্যান্ডহেল্ড’ (হাতে বহন করা যায়) থার্মোমিটারে জ্বর মাপা হচ্ছে।
এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশফেরত সব যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু আধুনিক কোন যন্ত্র এখনও বসানো হয়নি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শনে দেখা যায়, বিদেশ ফেরত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ‘হ্যান্ডহেল্ড’ থার্মোমিটার দিয়ে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। তবে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম আরও গতিশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিদেশফেরত যাত্রীরা। ইন্টারন্যাশনাল অ্যারাইভাল সিঁড়ি বেয়ে নামার পর যাত্রীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে প্রত্যেকের জ্বর মাপা হচ্ছে। জনে জনে জানতে চাওয়া হচ্ছে এক মাসের মধ্যে কাশি, সর্দি ও জ্বর হয়েছে কিনা। এখানে কিছু লোককে আতঙ্কিত হতেও দেখা যাচ্ছে। কর্তব্যরত ডাক্তাররা আবার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘হ্যান্ডহেল্ড’ থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপা হচ্ছে যাত্রীদের।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘হ্যান্ডহেল্ড’ থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপা হচ্ছে যাত্রীদের।
বিমানবন্দরের মেডিকেল টিমের সদস্য ডা. শাহিন চৌধুরী বলেন, ‘আর্ন্তজাতিক ফ্লাইট ল্যান্ডিং করার পর ইমিগ্রেশন হওয়ার আগেই আমরা হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে নিচ্ছি। বন্দরের একটি রুমকে রেডি রাখা হয়েছে আইসোলেশন রুম হিসেবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা সন্দেহজনক কাউকে পেলে এখান থেকে ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হবে। আশার কথা হলো এখনও সন্দেহজনক কাউকে পাওয়া যায়নি।’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার মাহমুদ আকতার বলেন, ‘চীন থেকে সরাসরি ফ্লাইট চট্টগ্রামে আসে না। তবে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান হয়ে আসা ফ্লাইটগুলোর প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। ডাক্তারদের টিমে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বিমানবন্দরে যাত্রীদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর প্রয়োজনে হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চারজনের একটি চিকিৎসা দল পালা করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কাজ করছেন। থার্মোমিটার ব্যবহার করে তারা যাত্রীদের জ্বর পরীক্ষা করেন। তবে কোনো থার্মাল স্ক্যানার নেই এখানে।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এই হল তিন হাতিয়ার!
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এই হল তিন হাতিয়ার!
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘শাহ আমানত বিমানবন্দরে একটি থার্মাল স্ক্যানার ছিল, সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। চীন থেকে সরাসরি কোনো ফ্লাইট চট্টগ্রামে যাওয়া-আসা করে না। যাত্রীদের মূলত ঢাকায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এরপরও জ্বরে আক্রান্ত কাউকে সন্দেহ করা হলে মেডিকেল দলকে জানানো হয়।’
গত ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে রেড এলার্ট জারি রয়েছে করোনাভাইরাস আতঙ্কে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন পোস্টার লাগানো আছে। সতর্ক করা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। তবে এটাতে বিচলিত হওয়ার কোন কারণ নেই। সতর্ক থাকলেই হচ্ছে। এর জন্য আরও বেশি সচেতনতা প্রয়োজন।’