পাপিয়া দম্পতির যত সম্পদ
নরসিংদীতে পাপিয়া দম্পতির আলিশান বাড়ি
অল্প সময়ের মধ্যে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ।
শনিবার তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। এর পর বেড়িয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর নানান তথ্য। পাওয়া যাচ্ছে পাপিয়া দম্পতির সম্পদের হিসেব।
নরসিংদী জেলা শহরে বাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকায় দুইতলা বিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে। অতি সম্প্রতি পৌর শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকায় তার স্বামী মতি সুমনের বিলাসবহুল ৬তলা বাড়ি করেছেন। বিলাদী মোড়ে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ এবং আরেকটি ৬ শতাংশের মূল্যবান দুটি প্লট রয়েছে। তার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মন্দীতে স্বামীর দোতলা একটি বাড়ি আছে।
রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে ‘রওশন ডমিনো রিলিভো’ বিলাসবহুল ভবনে তার ও তার স্বামীর নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া তার কালো ও সাদা রঙের দুটি হায়েস মাইক্রোবাস, একটি হ্যারিয়ার, একটি নোয়া ও একটি ভিজেল কার আছে।
নরসিংদী শহরে পাঁচটি মোটরসাইকেল রয়েছে বলে জানা গেছে। মোটরসাইকেলগুলো তার অনুসারীরা ব্যবহার করে।
নরসিংদী শহরে সুমন চৌধুরীর কেএমসি কার ওয়াশ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। কার ওয়াশ ব্যবসার আড়ালে এখানে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলে।
পাপিয়ার স্বামীর মালিকানায় থাইল্যান্ডে একটি বারও আছে। নরসিংদীর এসএমই শাখায় গত বছরের জুন পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজার ৮২৯ টাকা জমা ছিল।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নরসিংদী শাখায় পাপিয়ার হিসাবে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭০ টাকা ছিল। সিটি ব্যাংকে তার তিনটি হিসাব নম্বরের খোঁজ পাওয়া যায়। এর একটিতে ১ লাখ, অন্য দুটিতে ৫০ হাজার ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ডিপোজিট পাওয়া যায়।
পাপিয়ার সিটি ব্যাংকের একটি এমেক্স গোল্ড ক্রেডিট কার্ড ও একটি এমেক্স গ্রিন ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। রাজধানীর এফডিসি গেটের সঙ্গে ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামে তার একটি গাড়ির শোরুম আছে। নরসিংদীর শালিদা এলাকায় আর এস এম কার ওয়াশ নামে একটি গাড়ির সার্ভিস সেন্টার রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, ব্লাকমেইলই তাদের প্রধান পেশা। তারা প্রথমে সুন্দরী নারীদের পাঠায়। তারপর কৌশলে ধনী ব্যক্তিদের ভিডিও করে। পরে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শ্যামল কুমার সাহা বলেন, এত অল্প সময়ে কেউ বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হতে পারে না। তারা অনৈতিক কাজ করেই এ সব অর্জন করেছে। আর অসহায় ও দরিদ্র মেয়েদের চাকরি দেয়ার কথা বলে তাদের দেহ ব্যবসা করতে বাধ্য করত। নইলে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো।
নরসিংদী শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামীর চালচলন দেখে প্রথম থেকেই আমাদের সন্দেহ ছিল। তার চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য ও সন্দেহের বাইরে ছিল না। তার আয়ের উৎস সম্পর্কে সব সময় ধোঁয়াশা ছিল।
জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসিবুল ইসলাম মিন্টু বলেন, পাপিয়া ও সুমনের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তাদের সঙ্গে কারো ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আমার ধারণা নেই।
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি তৌহিদা সরকার রুনা বলেন, মহিলা যুবলীগের কমিটিতে ছয় বছর ধরে পাপিয়া ও আমি একসঙ্গে রয়েছি। আমরা একসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছি। কিন্তু কোনোভাবেই জানতে পারিনি পাপিয়া এত বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িত। শনিবার তাদের গ্রেফতারের পর আমরা এ বিষয়ে জানতে পারি।
নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, খারাপ লোকের অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ বহন করবে না। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অন্যায়মূলক কাজ করেছে। যা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দল ও আইন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।