রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » » গণতন্ত্রের সঙ্গে স্বাধীন গণমাধ্যমের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য
গণতন্ত্রের সঙ্গে স্বাধীন গণমাধ্যমের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য
‘বিতর্ক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাই স্বাধীন সংবাদপত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। তবে দেশে গণতন্ত্র না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সঠিক তথ্যনির্ভর, স্বাধীন ও দল নিরপেক্ষ অবস্থানই সংবাদপত্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
গতকাল শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট্র আয়োজিত ভার্চুয়ালি ৪০০তম সাপ্তাহিক গণবক্তৃতায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
‘স্বাধীনতার ৫০ বছর ও সংবাদপত্র’ শীর্ষক এই গণবক্তৃতায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খান।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ঘটনায় সংবাদপত্রের ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘এই দেশে সংবাদপত্রের গৌরবময় অতীত রয়েছে। সামরিক সরকারের সময় কঠিন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশে সংবাদপত্র কাজ করেছে। বিভিন্ন সরকারের হাতে মামলা, হামলা, হয়রানির শিকার হয়েও সংবাদপত্র গণতন্ত্র ও মানুষের কথা বলে যাচ্ছে। তবে গত তিন দশকে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালিত হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে।
মতিউর রহমান মনে করেন গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সংবাদপত্রকে কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্র এখন কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনলাইন বাস্ততার সম্মুখীন। কয়েক বছর ধরে বিশেষজ্ঞরা অনলাইন সংবাদপত্রের বিকাশের কথা বলে আসছিলেন। এখন তা বাস্তব। ছাপা পত্রিকার প্রকাশ কমেছে, আয় কমেছে, কমেছে বিজ্ঞাপন; অন্যদিকে অনলাইন পত্রিকার পাঠক ও আয় বাড়ছে। বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোর এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সংবাদপত্রের ভবিষ্যত এখন ডিজিটাল মাধ্যমে।’
গণবক্তৃতায় উপস্থিত শ্রোতারা বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সমাজ সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ফলে সংবাদমাধ্যমকে এটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এছাড়া সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষা হচ্ছে না বলেও শ্রোতাদের মন্তব্যে উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত গুণীজনদের মধ্যে ছিলেন গোলাম মুরশিদ, আলী রিয়াজ, ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, ডা. শুভাগত চৌধুরী, আবুল বারকাত, এম এম আকাশ, অধ্যাপক জাকির হোসেন রাজু, অধ্যাপক জাকিয়া আফরিন প্রমুখ।
ড. আলী রিয়াজ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে অনেক অর্জনের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো কথা বলার অধিকার ক্রমে সংকুচিত হয়ে আসা। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান স্লোগান ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ প্রতিষ্ঠা ছাড়া স্বাধীন গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর নয়।’
সভাপতির বক্তব্যে ড. সাখাওয়াত আলী খান বলেন, ‘বিতর্কের স্বাধীনতাই গণতন্ত্র। সংবাদপত্র সেই বিতর্ক চালিয়ে নেওয়ার প্রধান মাধ্যম। এটি করতে গিয়ে শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে তার মনোমালিন্য হওয়াই স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সংসদ-এই তিন স্তম্বের মতো সংবাদপত্রকেও পরষ্পর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রক্ষা এবং দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।’