বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১
প্রথম পাতা » জেলার খবর » দাইন্যা ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হত্যা মামলায় অর্থদাতার সাত বছরেও হদিস মেলেনি
দাইন্যা ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হত্যা মামলায় অর্থদাতার সাত বছরেও হদিস মেলেনি
লাবু খন্দকার-: টাংগাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউপির একাধিকবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত রফিকুল ইসলাম ফারুক হত্যা মামলা দীর্ঘ সাত বছর পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি অর্থদাতা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর শহরতলীর বটতলা কাচাবাজারে ভোরবেলায় ফারুক চেয়ারম্যানকে গুলি করে, কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে সন্ত্রাসীরা আঘাত করে খুন করেন। ওই হত্যাকান্ডে ২১ ডিসেম্বর নিহতের ছোট ভাই মো: লাভলু মিয়া লাবু টাংগাইল মডেল থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে মামলাটি টাংগাইল মডেল থানার এস,আই আব্দুল হান্নান তদন্ত করেন। পরে মামলায় আদালত তদন্তের দায়িত্ব দেন টাংগাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ( ডিবির এস, আই) অশোক কুমার সিংহ পি পি এম এর উপর। ডি বি তদন্তে খুনিদের তথ্য বেরিয়ে আসে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে ,দাইন্যা ইউপির শ্রীফলিয়াটা গ্রামের মো: সহিদ মিয়ার পুত্র মো: শাজাহান মিয়াসহ পাচ খুনির তথ্য । পলাতক আসামী হিসাবে হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায় টাংগাইল শহরতলী কলেজপাড়ার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সানিয়াত খান বাপ্পার।
এরপর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান টাংগাইল জেলা সি, আই, ডির এস, আই মো: সোহরাব হোসেন ও পুলিশ পরিদর্শক জাফর ইকবাল। তারপর বদলিজণিত কারণে মামলাটি তদন্ত করেন সি, আই, ডি পুলিশ পরিদর্শক আতাউর রহমান আকন্দ ও পুণরায় পদোন্নতিজণিত কারণে মামলাটি তদন্ত করেন সি আই ডি পুলিশ পরিদর্শক মো: রফিক উদ্দিন আহম্মেদ।
এদিকে, মামলায় আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী থেকে জানা যায়, অভিযুক্ত ছানোয়ার চাপাতি দিয়ে ফারুক চেয়ারম্যানের মাথায় কোপ দেয়ার কারণে শাজাহান তাকে বিশ হাজার টাকা দেয়। হত্যার পরিকল্পনাকালে ছানোয়ার খুনিদেরকে চেয়ারম্যান ফারুককে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। ছানোয়ার পরিকল্পনায় আরও জানায় যে, চেয়ারম্যান ফারুককে হত্যা করলে সানিয়াত খান বাপ্পা তাকে পাচ লাখ টাকা দেবে। এমনকি খুনিরা যদি চেয়ারম্যান ফারুককে হত্যা করে, তাহলে দায় দায়িত্ব সব বাপ্পা নিবে।
মামলায় তথ্য থেকে আরও জানা যায়, সানিয়াত খান বাপ্পা তার বডিগার্ড শাজাহানকে জানায় যে, দাইন্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুককে মার্ডর করতে হবে। এই কাজের জন্য ১০ লাখ টাকা নাকি পেয়েছে বাপ্পা।ওই টাকা থেকে পাচ লাখ টাকা শাজাহানসহ জড়িত সকলকে দিবে বলে জানায় ওদের বাপ্পা।
ফারুক চেয়ারম্যানকে হত্যার পর শাজাহান, সুজনসহ চলে যায় বটতলা থেকে তালতলা হয়ে পার্কের বাজার হয়ে সোজা সানিয়াত খান বাপ্পার বাসায়। মোটর সাইকেলে যোগে আজাদ ও রুজবেল আসে।তারা বাপ্পার বাসা থেকে যার যার বাসায় চলে যায়। খুনিরা মোবাইলে পরিকল্পনা করে । খুনি আজাদই ফারুক চেয়ারম্যানকে গুলি করে যা মামলার নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
বর্তমানে এই মামলায় তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক মো: রফিক উদ্দিন আহম্মেদকে মুঠোফোনে তথ্য জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তদন্ত সাপেক্ষে যতটুকু সম্ভব তথ্য বের করেছি।
তবে খুনের বিষয়ে অর্থদাতার তথ্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ খুনের সাথে সম্পৃক্ত অর্থদাতা পলাতক।
এ মামলায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত ফারুক চেয়ারম্যানের খুনিদের অর্থদাতার ব্যাপারে তার ছোট ভাই দাইন্যা ইউপির বর্তমান সফল চেয়ারম্যান মো: লাভলু মিয়া লাবুকে জিঙ্গাসাকালে তিনি তার বড় ভাই ফারুক চেয়ারম্যানের খুনিদের অর্থদাতাকে খুজে বের করে গ্রেফতার পূর্বক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন । তিনি জানান, আমার প্রাণপ্রিয় বড় ভাই শহীদ রফিকুল ইসলাম ফারুক চেয়ারম্যান দাইন্যা ইউপিবাসীর কল্যাণের জন্য জীবন বাজি রেখে অতন্ত্র প্রহরী হিসাবে কাজ করে গেছেন। তিনি সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে এ ইউপিকে সন্ত্রাস মুক্ত রাখতে যতদিন বেচেছেন ততদিন ইউপিবাসীর স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে, তাদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, তার প্রাণপ্রিয় ইউপিবাসীকে সুরক্ষা দিতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এজন্য তাকে খুনিরা বার বার হত্যার হুমকি দিতো কিন্তু তাতে তিনি একটুও বিচলিত হতেন না। অবশেষে আমার ভাইকে সেই ২০ ডিসেম্বর খুনিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করল। তারা আমার ভাইকে হত্যা করে এটা প্রমাণ করল যে, দাইন্যা ইউপির উন্নয়ন ও সন্ত্রাস দমন তারা চায়না। তারা নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছে এ ইউপির উন্নয়ন। কিন্তু ওরা বোকা, ওরা জানেনা যে দাইন্যা ইউপির প্রতিটি নিরীহ মানুষই এক একজন করে শতজন, হাজার জনই হচ্ছে এক একজন চেয়ারম্যান ফারুক, সাহসী ও সৎ চেয়ারম্যান ফারুক ভাইয়ের আদর্শই ও কন্ঠস্বরই এ ইউনিয়নের প্রতিটি প্রতিবাদী জনতার।