বৃহস্পতিবার, ২২ জানুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » হরতাল অধিকার নয় ডেমোক্রেটিক কালচার : মুজিবুল হক
হরতাল অধিকার নয় ডেমোক্রেটিক কালচার : মুজিবুল হক
পক্ষকাল প্রতিবেদক : শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেছেন, হরতাল কোনো ডেমোক্রেটিক রাইটস না, এটা একটি ডেমোক্রেটিক কালচার। সংবিধানের কোথাও হরতালের আইনগত ভিত্তি নেই। তাই ডেমোক্রেটিক কালচার দিয়ে সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা যায় না।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক : স্বীকৃতি, অধিকার ও সামাজিক সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ শ্রম অধিকার ফোরাম ও গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক এ সেমিনারের আয়োজন করে।
হরতাল অবরোধের মধ্যে পড়ে যারা কর্মহীন হয়েছে তাদের ব্যাপারে কী করা হবে এই প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কাজ না পাওয়ার বিষয়ে যারা হরতাল অবরোধ ডেকেছে তাদের কাছেই জিজ্ঞাসা করতে হবে।
মুজিবুল হক বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকা অব্যবহৃত জায়গা ও সম্পত্তিকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে। বিজয়নগরের শ্রম মন্ত্রণালয়ের জায়গায় ২৫তলা ভবন বানিয়ে শ্রমিক ভবনের সব কাজ সরিয়ে আনা হবে। এখানে শ্রমিক সংগঠনগুলো প্রায় বিনা ভাড়ায় সভা সমাবেশ করতে পারবে। তেজগাঁওয়ে ২০তলা ভবন বানিয়ে শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল করা হবে। একইভাবে সারাদেশের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অব্যবহৃত সব জায়গা পরিকল্পিতভাবে শ্রমিক কল্যাণে কাজে লাগানো হবে।
তিনি বলেন, আগামী মে মাসের মধ্যে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালার ব্যাপারে কিছু একটা করা হবে। শ্রম আইন বিধি বাস্তবায়ন করে আউট সোর্সিং শ্রমিকদের মজুরি ঠিকমতো পাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই বিধি বাস্তবায়ন হলে ঠিকাদাররা ১২ হাজার টাকা তুলে শ্রমিকদের সাড়ে ৫ হাজার টাকা মজুরি দিতে পারবে না। এ ছাড়া সরকার অপ্রচলিত খাতের শ্রমিকদের গ্রুপ বীমার আওতায় আনার চেষ্টা করছে। কোনো শ্রমিকের ছেলে-মেয়ে মেধাবী হলে তার শিক্ষা ব্যয় সরকার বহন করবে। সরকার সবচেয়ে বড় সেক্টরের কৃষি শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্যও কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. ইসরাফিল আলম, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপের সমন্বয়কারী শাহ মো. আবু জাফর ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি এবং ত্রি-পক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শুক্কুর মাহমুদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— জাতীয় শ্রমিক জোটের হেনা চৌধুরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী হাসি বেগম, হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরিফ চৌধুরী, কৃষি শ্রমিকদের পক্ষে কর্মজীবী নারীর।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা-২০১০’ এর খসড়ার ওপর গৃহশ্রমিকদের সুপারিশ উপস্থাপন করেন বিলস’র এ্যাডভোকেসি অফিসার এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। সেমিনারের উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ শ্রম অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব জাকির হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক ও বিলস’র সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শ্রম অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক আবুল হোসাইন। সমাপনী বক্তব্য রাখেন নারী মৈত্রীর পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি।
গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৪ এর খসড়ার ওপর গৃহশ্রমিকদের জন্য সেমিনারে মজুরি ছাড়া ঈদ ও পূজায় উৎসব ভাতা দেওয়াসহ ১৩ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসরাফিল আলম এমপি বলেন, দেশে ৮৬ ভাগ অপ্রচলিত শ্রমিকের আইনগত ও সামাজিক অধিকার বলতে কিছুই নেই। সবকিছু মিলে মনে হয় এরা মানুষই না। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা বিল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে।
জাতীয় সংসদের সদস্য ইসরাফিল আলমের বরাত দিয়ে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপের সমন্বয়কারী শাহ মো. আবু জাফর বলেন, জাতীয় সংসদে শ্রমিকদের পক্ষে আইন পাস করানো কঠিন ব্যাপার। শ্রমিকদের কথা শুনলে মালিকদের গা জ্বালা করে। মালিকদের প্রতিনিধিরাই পার্লামেন্ট দখল করে রেখেছে। এখানে শ্রমিকদের প্রতিনিধি খুবই নগণ্য।