লকডাউন বাড়ছে, জানালেন ওবায়দুল কাদের
দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে আরও এক সপ্তাহের লকডাউনের কথা ভাবছে সরকার। এমনটা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সকালে সরকারি বাসভবন থেকে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। বেড়েছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা। এমতাবস্থায় সরকার জনস্বার্থে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।
চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনে জনগণের উদাসীন মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না বলেও জানান তিনি।
এর আগে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আর মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি রুখতে সারাদেশে সোমবার (০৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে সাত দিনের লকডাউন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণের শেষ অস্ত্র লকডাউনের সুফল পেতে রোগী শনাক্ত, আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতসহ রোগ-প্রতিরোধের বিজ্ঞানভিত্তিক সব ব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে হবে।
লকডাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক শক্তি আর ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নেই।
প্রতিদিনই কোভিড সংক্রমণের নতুন নতুন রেকর্ড ভাঙছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। ফেব্রুয়ারিতে দুই শতাংশের ঘরে থাকা সংক্রমণ হার লাফিয়ে বাড়তে বাড়তে এখন ছাড়িয়ে গেছে ২৩ শতাংশে। করোনার ধাক্কায় যখন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার উপক্রম তখন বছর ঘুরে আবারো লকডাউনে বাংলাদেশ।
দেশে করোনার এমন ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। রোববার (৪ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সোমবার (৫ এপ্রিল) ভোর ছয়টা থেকে থেকে আগামী রোববার (১১ এপ্রিল) রাত ১২টা পর্যন্ত জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে।
এর আগে গত বছরের ৮ মার্চ দেশে যখন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় তখনই নড়েচড়ে বসে সরকার। এরপর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবরের পর করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুতই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সেই ছুটি ৩১ মে পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এক বছর পর সংক্রমণ মোকাবিলায় আবারও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিল সরকার। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে দেশজুড়ে সোমবার সকাল ছয়টা থেকে এক সপ্তাহের জন্য শুরু হয় লকডাউন।
এ সময় মানুষের কাজ ও চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে করা হবে। জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছুই বন্ধ থাকবে। চলবে না কোনো গণপরিবহন। অভ্যন্তরীণ পথে উড়বে না উড়োজাহাজও। বন্ধ থাকবে যাত্রীবাহী ট্রেনও।
লকডাউন চলাকালে জরুরি কাজের জন্য সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব ব্যবস্থায় কর্মীদের অফিসে আনা-নেওয়ার নির্দেশনা সরকারের। একইভাবে শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার শর্তে শিল্পকারখানা ও নির্মাণকাজ চালু রাখা যাবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে যে বিষয়গুলো-
১. পণ্যপরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবাদান, বিদেশগামী/বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।
২. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস-জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
৩. সকল সরকারি/আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্পকারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃক শিল্পকারখানা এলাকায় নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল/চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফনকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
৫. খাবারের দোকান ও হোটেল (কেবল খাদ্য বিক্রয় সরবরাহ) করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না।
৬. শপিংমলসহ অন্যান্য দোকানসমূহ বন্ধ থাকবে। তবে পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে যেতে পারবে না।
৭. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।
৮. ব্যাংকিংব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখা হবে।