শনিবার, ২১ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » গ্রেনেড হামলার মামলা ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির অপেক্ষায়
গ্রেনেড হামলার মামলা ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির অপেক্ষায়
ডেস্ক সংবাদ–
বিশ্বের জঘন্যতম ঘটনার মধ্য একটি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা। নির্মম এই ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল হয়। একটি হত্যা এবং অপরটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে। মামলায় মোট ৪৯ জনকে আসামি করা হয়।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর বিচারিক আদালতের রায়ে পৃথকভাবে দুটি মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। এদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন। এছাড়া তারেক রহমান এবং হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জনকে মামলার নথিতে পলাতক দেখানো হয়েছে। এছাড়া তিনজনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দেয়া এই রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা অনুমোদনের জন্য দুটি মামলায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার এই রায়ের কপি (ডেথ রেফারেন্স) ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ছিল হত্যা মামলায় ৩৬৪ পৃষ্ঠা ও বিস্ফোরক দ্রব্য মামলায় ৩০৭ পৃষ্ঠার মূল রায়। এরপর কারাবন্দী আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। এই আপিল শুনানি এবং রায়ের কপি (ডেথ রেফারেন্স) অপেক্ষায় আছে ভয়াবহ সেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়।
অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুর্বৃত্তরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। এই মামলার নথিপত্র অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই বাছাই করে পেপার বুক তৈরি করে যাবতীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিধি অনুসারে খুব শিগগিরই শুনানির পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শুক্রবার (২০ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বলেন, সব আইনি বিধি-বিধান ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রায় কার্যকর হবে। এই রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান হবে এবং বাংলাদেশ আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ-শান্তিপূর্ণ আবাসভূমিতে পরিণত হবে।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। সেদিন ছিলো শনিবার। ২০০৪ সালের (২১ আগস্ট) শনিবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ছিল শান্তিপ্রিয় সমাবেশ। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ছিল হাজার হাজার মানুষের সমাগম। সমাবেশ শেষে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একটি গাড়িতে চেপে বিকেল সাড়ে চারটায় সমাবেশস্থলে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। তখন বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শেষ হবার মুহূর্তেই শুরু হয় ভয়াবহ নারকীয় গ্রেনেড হামলা।
বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড। আর বৈচিত্র্যময় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করেই একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সমাবেশস্থল। সেখান থেকে কোনমতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রানে রক্ষা পেলেও নানা ভাবে আহত হন তিনি। সারা জীবনের মতো হারিয়েছেন আইভি রহমান, রিজিয়া বেগম, ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আওয়ামী লীগের অনেক আদর্শবান নেতা।