বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » রাজনীতি » বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে জাসদকে জড়িয়ে শেখ সেলিমের বক্তব্যের প্রতিবাদ: জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে জাসদকে জড়িয়ে শেখ সেলিমের বক্তব্যের প্রতিবাদ: জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে জাসদকে জড়িয়ে শেখ সেলিমের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছে জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি। আজ ২৬ আগস্ট ২০২১ বৃহস্পতিবার জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির পক্ষ থেকে দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে: বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে জাসদকে যুক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমের বক্তব্য রাজনৈতিক দূরসন্ধিমূলক মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। শেখ সেলিম বঙ্গবন্ধুর খুনীগোষ্ঠী এবং খুনীগোষ্ঠীর পাকিস্তানপন্থার রাজনীতির ধারকদের আড়াল করার উদ্দেশ্যেই মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস পেয়েছেন। জাসদ কখনই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে নাই। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী গোষ্ঠীর সাথে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পূর্বাপর কর্নেল তাহের বা হাসানুল হক ইনু বা জাসদের কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। জাসদ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সুফলভোগীও নয়। কারা খন্দকার মুশতাকসহ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে হাত মিলিয়েছিল, খন্দকার মুশতাকের মন্ত্রী সভায় কারা সদস্য হয়েছিল, কারা মুশতাককে বৈধতা দিয়েছিল, কারা মুশতাকের সময় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত ছিল, কারা খুনিদের রক্ষা করেছে, কারা খুনিদের পুরস্কৃত করেছে তা আজ সমগ্র জাতির সামনে প্রকাশিত।
খন্দকার মুশতাকের ৮৩ দিনের অবৈধ শাসনকালে কারাবন্দি জাসদ নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেয়া হয়নি। জাসদ খুনি খন্দকার মুশতাকের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ঐ ৮৩ দিনেও জাসদের নেতা-কর্মীদের উপর চরম রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-নির্যাচন চালানো হয়েছে। চট্টগ্রামের জাসদ নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা খসরু, রাজবাড়ীর জাসদ নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা আজাদ, গাইবান্ধার জাসদ নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা রুস্তমসহ সারা দেশে কয়েকশত জাসদ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ‘দূরের না, আপন লোকরাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। আমার মা যাদের রেঁধে খাওয়াতেন তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এজাহার, এফআইআর, তদন্ত, চার্জশীট, সাক্ষীদের জেরা ও সওয়াল জবাব, চার্জের উপর আদালতে যুক্তিতর্ক, আদালতের রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষনের কোথাও জাসদ বা জাসদের কোনো নেতার নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি। এটাই স্বাভাবিক ও সত্য। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের সাথে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পূর্বাপর জাসদের কোনো ধরণের যোগাযোগ ছিল না। শেখ সেলিম বা কেউই মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ইতিহাসের এই সত্য আড়াল করতে পারবে না।
মুক্তিযুদ্ধে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামন্ডলির মধ্য দিয়ে যে জাতীয় ঐক্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল, স্বাধীন বাংলাদেশে সেই জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে দলীয় সরকার গঠন করতে, ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থী অংশ এবং তাজউদ্দিন আহমেদকে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করতে কারা বঙ্গবন্ধুর উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলÑ তাও আজ জাতির সামনে প্রকাশিত। এই ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্ত করে বঙ্গবন্ধুকে একলা ও অসহায় করে ‘চাটার দল’, ‘চোরের খনি’র মধ্যে ফেলে দিয়েছিল।
যারা জাসদ গঠন করেছিলেন তারা জাসদ গঠনের ১০ মাস আগে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তণের কয়েক দিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে তার নেতৃত্বে বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। এমন কি ছাত্রলীগের বিভক্তি, ১৯৭২ সালের ২১-২২-২৩ জুন একই তারিখে দুই জায়গায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সম্মেলনের একটিতে বঙ্গবন্ধুর যোগদানের পরও ৩১ অক্টোবর জাসদ গঠনের আগ পর্যন্ত কয়েক মাস তারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সাথে জাসদকে যুক্ত করে বক্তব্য প্রদানকারী শেখ সেলিম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার আপন মামা বঙ্গবন্ধু ও আপন ভাই শেখ মনির লাশ ফেলে রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের সাথে যুক্ত তৎকালীন আমেরিকার দূতাবাসে গিয়ে কি করেছিলেন তা জাতি জানতে চায়।
শেখ সেলিমসহ কতিপয় ব্যক্তির বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আড়াল করার ঘৃণ্য রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করে দেয়ার জন্যই জাসদ শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এবং এর পূর্বাপর সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন ও শ্বেতপত্র প্রকাশ করার দাবি করে আসছে।