বিপিসির কেনাকাটায় অনিয়মের ধরন দেখে শকড সংসদীয় কমিটি
জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির পর আলোচনায় থাকা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বিভিন্ন কেনাকাটায় অনিয়মের ধরন ও নিরীক্ষা আপত্তি দেখে শকড (হতবাক) সংসদীয় কমিটি।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এই বৈঠকে বিপিসির কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি আসম ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আরও অংশ নেন কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ওমর ফারুক চৌধুরী, মাহবুব উল আলম হানিফ এবং জিল্লুর হাকিম।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আসম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, বিপিসির কেনাকাটায় স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা খুবই কম। অনিয়মের যা চিত্র তাতে কমিটি শকড (হতবাক)। তাদের কেনাকাটায় অনিয়ম আছে। অডিট আপত্তিও আছে। এসব আপত্তি ঠিকমত নিষ্পত্তি করা হয়নি। যেসব ব্যক্তির নাম ধরে অডিট নিষ্পত্তি করা হয়েছিল সেগুলো তারা করেনি। এমনকি দুদকের কিছু কথাও তারা আমলে নেয়নি।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বিপিসির অনিয়ম নিয়ে আলোচনার বিষয়টি কার্যসূচিতে থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এই প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বিপিসি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে বিপিসিতে প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের বিশেষ অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক বছর শেষ হওয়ার পরেও বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করেনি বিপিসি। যা আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী। অডিট দফতর বলেছে, নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক হিসেব চূড়ান্ত না করার দায় যাদের ওপর বর্তায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে বেশি তেল আমদানি করায় অতিরিক্ত জাহাজ ফ্লোটিং করতে হয়। এতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। ফলে ৫০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়।
একই অর্থবছরে ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ব্যয় না করে জমাতিরিক্ত ঋণ (ওভার ড্রাফট) নিয়ে ব্যয় করায় ২৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিপিসির নিজস্ব তহবিলের অর্থ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক ঋণ নেওয়ায় সুদ বাবদ অর্থ ক্ষতি হয়েছে বলে সিএজি অফিস ওই সময় জানায়। ওই অর্থবছরে সিএজি অফিস এক অডিট আপত্তিতে জানায়, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ এবং যথাযথ পর্যায়ের প্রত্যক্ষ তদারকির অভাবে বিপিসির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও পারফরমেন্সকে প্রভাবিত করেছে।
এদিকে, বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের জ্বালানিমূল্য সমন্বয়ের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া বিপিসির পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ এবং আপদকালীন সময়ে পর্যাপ্ত তহবিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। কমিটির পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে, মন্ত্রণালয় বলেছে- প্রতিবেশি দেশের সাথে সমন্বয় করে তারা দাম বাড়িয়েছে। না হলে তেল এদিক-সেদিক হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সভাপতি জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে মূল্য সমন্বয় করে দেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় কমিটিকে জানিয়েছে।
সুত্র বার্তা২৪