
রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ » গণপূর্তের দুর্নীতির বরপুত্র হত্যা মামলার আসামী সাইফুজ্জামান চুন্নু এখনো বহাল তবিয়তে
গণপূর্তের দুর্নীতির বরপুত্র হত্যা মামলার আসামী সাইফুজ্জামান চুন্নু এখনো বহাল তবিয়তে
পক্ষকাল রিপোর্ট : বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতির বিরোধী শক্ত অবস্থানে থাকলেও কেন জানি কিছুতেই সরকার দূর্নীতির লাগাম টানতে পারছে না, আর গনপূর্তে যেন সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে অল্প কিছুদিনের মধ্যে গড়ে তুলেছে শতশত কোটি টাকার সম্পদ ও নগদ অর্থ। বিদেশে অর্থ পাচারের পাশাপাশি বাড়িও গড়ে তুলেছেন দেশের বাইরে। দেশের মাটিতেও গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির সাম্রাজ্য। নিজ এলাকা পটুয়াখালিতে গড়ে তুলেছেন নাহিয়ান ব্রীকস ফিল্ড, পটুয়াখালি কলেজ রোডে দু’তলা বাড়ী, পটুয়াখালি সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধারান্দি গ্রামে ৫ একর জমি, পটুয়াখালিতে নেক্সাস নামে একটি গামেন্টস এর শোরুম, সাভারে ১০ কাঠার একটি প্লট, ঢাকা ধানন্ডির সেন্ট্রাল রোডে একটি ফ্ল্যাট, বেইলী রোডে একটি ফ্ল্যাট, এছাড়াও রয়েছে নামে বেনামে অসংখ্য সম্পদ। যার কথা বলছি তিনি, পটুয়াখালি সদর থানার কমলাপুর গ্রামের আওয়ামী দোষর মো. সাইফুজ্জামান চুন্নুর কথা। যিনি বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগের ফরিদপুরে কর্মরত।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামি সাইফুজ্জামান চুন্নু।হত্যা মামলার আসামী হয়েও এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনসহ সচেতন সাধারন মানুষ।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুন্নু দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, অনিয়ম-দুর্নীতিতে সামনের সারিতে ছিলেন। ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থদাতা হিসেবে সর্ব প্রথমে রয়েছেন এই সাইফুজ্জামান চুন্নু।নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নুর নামে রামপুরা থানায় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা রয়েছে।
চুন্নু গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর গণপূর্ত বিভাগে ছিল।এছাড়া ঘুরে ফিরে ঢাকাতেই ছিল।যেখানে দুর্নীতি সেখানেই চুন্নু। এমন কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম নেই যা তিনি করেন না। সাইফুজ্জামান চুন্নু সাবেক গনপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর কাছের লোক দাবি করায় কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো শব্দ করতেন না আওয়ামী শাষনামলে।
বর্তমানে তিনি গনপূর্ত উপদেষ্টা, সচিব ও প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন হিসেবে সকলের কাছে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন।
গনপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে চুন্নু ভীতি কাজ করছে। কারন অধিদপ্তরের মধ্যে তার নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মূলত এ সিন্ডিকেটই ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে অধিদপ্তরকে নিয়ন্ত্রন করতো। এছাড়া গণপূর্তের নাসিম শিকদারের নাম ভাঙ্গিয়ে নির্বিচারে নানা অনিয়ম ও
দুর্নীতি করেছে। শুধু দুর্নীতিই নন, এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা তিনি করেননি। ৫ আগষ্টের পরে এখন তার কাজে কিছু ভাটা পরলেও নানা ভাবে তার অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে চাচ্ছেন।
সে নাসিম শিকদারকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নিত। এদিকে, সাবেক গনপুর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে নানা প্রক্রিয়ায় বদলী ও টেন্ডার বানিজ্য কনেছে এই দুর্নতিবাজ সাইফুজ্জামান চুন্নু। কারন তিনি সাবেক গনপুর্ত মন্ত্রীর সহযোগিতায়ই মূলত দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, সাইফুজ্জামান চুন্নুর স্ত্রীর নাম ডা: সাইমুন নাহার (এমবিবিএস), তিনি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লেকচারার। তিনি তার ভাই (চাচাত) শামীমের মাধ্যমে আর্থিক লেন দেন করেন। পটুয়াখালির সোহেল রানার মাধ্যমে পটুয়াখালির সবকিছু নিয়ন্ত্রন করেন তিনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাইফুজ্জামান চুন্নু বেপরোয়া লুটপাট,
দূর্নীতির মাধ্যমে সরকারের শত শত কোটি টাকার ক্ষতি করে বিশাল অংকের টাকা তুলে দিচ্ছেন আওয়ামী নেতাদের হাতে।তার আত্মীয় ডিজিএফআই এর এক শীর্ষ কর্তা ও তার মামা শশুর আওয়ামীলীলীগ নেতা হওয়ার সুবাধে আওয়ামী শাষনামলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হয়েছেন ধনকুব।
৫ আগষ্টের পরে ভোল্ট পাল্টানোর চেষ্টা করছেন।
সাইফুজ্জামান চুন্নু গণপূর্ত অধিদপ্তর মিরপুর বিভাগে থাকাকালীন সময়ে তিনি আওয়ামী নেতাদের মাঝে কাজ বন্টন করে দিতেন টেন্ডার ছাড়াই।
এ সময়ে গণপূর্ত বিভাগের সব চেয়ে বেশী প্রকল্পের কাজ করেছেন মিরপুর বিভাগে। পরবর্তীতে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এ আসার পরও হাতিয়ে নেয় অনেক বড় বড় কাজ। যার মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। রাজনৈতিক বলয়ের সূত্রগুলো বলছে, ছাত্র জীবনে আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র লীগের নেতা ছিলেন সাইফুজ্জামান চুন্নুু।
সেই সূত্রে আওয়ামীলীগের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের সাথে শুরু থেকেই একটি আদর্শিক সম্পর্ক গড়ে যায় তার। সে সুযোগে এক সময় তিনি জড়িয়ে যান আওয়ামী সিন্ডিকেটের সাথে।
ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সাথে ঘনিষ্ট হন সাইফুজ্জামান চুন্নু। এর পর আর তাকে পেছনে ফিরতে হয়নি।
ইচ্ছে মতো সরকারি টাকা ভাগ বাটোয়ারার পাশাপাশি নিয়োগ বদলি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ গণপূর্তের অপ্রতিরোধ্য একজন ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন তিনি। কয়েক বছরে বনে যান বহু কোটি টাকার মালিক। দেশে নামে বেনামে গড়েছেন অনেক সম্পদ। বিদেশে টাকা পাচার সহ বেশ কয়েকটি দেশে টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে তার নামে।
এ সব বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান এর সাথে যোগযোগ করা হলে গণমাধ্যমে থাকা তার অনেক পরিচিতদের নাম শুনিয়ে বিশেষ একজনের সাথে কথা বলতে বলে ফোন কেটে দেন। সূত্রমতে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যায়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আছে নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে। মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চুন্নুর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও সেটি ধামাচাপা পড়ে যায়। ২৩ সালের আগস্ট মাসে এই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
গণপূর্তের ঢাকা মেট্রো জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময় বিভিন্ন কাজ ভাগিয়ে নেন। অভিযোগ আছে, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া, নিয়োগ বদলি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ সবই করেন তিনি।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর পাইকপাড়াস্থ পিডব্লিউডি ট্রেনিং সেন্টারের (পুরাতন) দ্বিতীয় তলার সিড়ির পূর্ব পাশের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত কক্ষ নম্বর ৭ ও ৮ দুটি কক্ষকে আইবি বাংলোতে রূপান্তরের লক্ষ্যে সংস্কার/মেরামত ও আধুনিকায়ন কাজের জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কাজ সম্পন্ন না করে বরাদ্দকৃত অর্থ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দেওয়া হয়।
এ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নু কমিশন নেন বলে অভিযোগ আছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত্র কমিটি করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২৩ সালের আগস্ট মাসে এই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে। মুহাম্মদ সোহেল হাসান গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলোতে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেন। অভিযোগ রয়েছে, কাজ না করে অর্থ উত্তোলন করার অভিযোগে তদন্ত শুরু হলে প্রভাব খাটিয়ে রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে কাজ করেন সাইফুজ্জামান চুন্নু।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে থাকাকালীন বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থ উত্তোলন করেন তিনি। গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নুর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো পুরনো বিষয়, আর কিছু খুঁজে পেলেন না। আপনি আমার অফিসে আসেন, এই বিষয়ে সামনাসামনি কথা বলবো।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসান বলেন, ‘গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে সচিব স্যারের কাছে।’ সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মুহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘এই বিষয় স্যার বলতে পারবেন।’