
বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » মাগুরায় এনজিও ও দরবারের টাকা আত্মসাৎ, হজ্বের আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালান
মাগুরায় এনজিও ও দরবারের টাকা আত্মসাৎ, হজ্বের আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালান
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ভুক্তভোগীরা টাকা চাইতে গিয়ে হামলা,পাল্টা হামলার অভিযোগ
মাগুরা জেলার ইছাখাদা গ্রামে এনজিও ‘আল এহসান (এহসান এস বাংলাদেশ)’–এর দীর্ঘদিনের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রামজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, তারা তাদের সঞ্চিত টাকা চাইতে গেলে হামলার শিকার হন, আর এর পেছনে রয়েছেন ক্ষমতাধর হজ্ব ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল।
ঘটনার সূত্রপাত হাজরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম শেখকে ঘিরে, যিনি উক্ত এনজিও পরিচালনা করতেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ১৬ বছর ধরে গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না পেয়ে সাধারণ মানুষ বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
৫ আগস্ট ২০২৪ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেলিম শেখের বাড়িতে গ্রাহকরা টাকা চাইতে গেলে বাকবিতণ্ডা হয়। মোস্তফা কামাল তখন রমজানের মাঝামাঝি টাকা ফেরতের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ৩ এপ্রিল ২০২৫ ফের টাকা চাইতে গেলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা গ্রাহকদের ওপর হামলা চালায়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন—জহির, পিয়ারুল, মইনুল ও রাজু, তারা বর্তমানে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগীদের দাবি, মোস্তফা কামাল তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভগ্নিপতি সেলিম শেখকে আত্মগোপনে পাঠিয়েছেন এবং সাজানো ভাঙচুরের নাটক করে উল্টো গ্রাহকদের বিরুদ্ধেই মাগুরা সদর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় তিনি ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১০–১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, তার বাড়ি থেকে ৩৫ ভরি স্বর্ণ ও ৩ লাখ টাকা লুট হয়েছে।
মোস্তফা কামালকে ঘিরে আরও গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে। এলাকাবাসীর দাবি, হজ্ব ব্যবসার আড়ালে তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত। এই প্রক্রিয়ায় হজ্বযাত্রীদের মাধ্যমে বিশেষ কৌশলে সোনা বাংলাদেশে আনা হয়, যা এলাকাবাসীর কাছে ওপেন সিক্রেট।
হাজী সৈয়দ আবু বাকার জানান, ২০২৩ সালে মোস্তফা কামালের মাধ্যমে তিনি ও তার স্ত্রীসহ ৪৮ জন হজ্বে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় মোস্তফা কামাল তার স্ত্রীর গলায় সোনার চেইন পরাতে চাইলে তারা বাধা দেন। তিনি বলেন, “আমরা হজ্ব করতে গিয়েছি, অন্যায় করতে না।” এরপর মোস্তফা কামাল অন্যান্য নারী হাজীদের গলায় মোটা সোনার চেইন পরিয়ে দেশে ফেরেন এবং পরে সেগুলো সংগ্রহ করেন।
এ বিষয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, তিনি সোনা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। “নিয়ার এন্ড ফার ট্রাভেলস” (লাইসেন্স নং ৩৩৯)–এর মাধ্যমে তিনি দুই হাজারের বেশি হজ্বযাত্রী পাঠিয়েছেন। প্রতি মাসে সৌদি আরব যেয়ে অল্প পরিমাণ সোনা আনেন বলে স্বীকার করেন।
ইছাখাদা দরবার শরীফের সভাপতি ইমরান হোসেন পলাশ জানান, আগের কমিটিতে মোস্তফা কামালের ভগ্নিপতি সেলিম শেখ ক্যাশিয়ার থাকাকালে কোনো রেজুলেশন ছাড়াই প্রতি শুক্রবার ৫০০ টাকা বেতন নেন এবং মোট ৯৯,৭৬৮ টাকা আত্মসাৎ করেন। কমিটির মেয়াদ শেষ হলে এবং সরকার পতনের পর তিনি আত্মগোপনে যান।
এদিকে মোস্তফা কামালের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। একদিকে তার জামায়াত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে মাগুরা জেলা জামায়াতের আমীর এমবি বাকের ৫ এপ্রিল একটি প্রত্যয়নপত্রে তাকে নিবেদিত জামায়াত কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে তাকে দেখা গেছে মাগুরা-১ আসনের সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখর ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুন্ডুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে। এছাড়া মাগুরা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা মোছাঃ সোনিয়া পারভীনের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা গেছে।
ছবি বিষয়ে মোস্তফা কামাল জানান, এটি তার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া অনুষ্ঠান এবং অন্যটি হজ্ব কর্মসূচির। তবে তিনি সোনিয়া পারভীনের পক্ষে নির্বাচনী কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, মোস্তফা কামাল জামায়াত-শিবির পরিচয় ব্যবহার করেও বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন। তারা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারাই জাতির বিবেক। আমরা চাই, আপনারা সত্য উদঘাটন করে জাতির সামনে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরুন।”