
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » কেবল আফসোস,এতগুলো মানুষের জীবন দান আর পঙ্গুত্ব প্রায় বৃথা হয়ে গেল..
কেবল আফসোস,এতগুলো মানুষের জীবন দান আর পঙ্গুত্ব প্রায় বৃথা হয়ে গেল..
আলী জামান শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫:
গতকাল বিএনপির মধ্যমসারীর একজন নেতা জোর গলায় বললেন,ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা নির্বাচন আদায় করে নেবো।এইটা কেবল তার কথা বললে ভুল হবে,বিএনপির উচ্চস্তরের সকল নেতাদের মনের কথা।
কিন্তু একটা কথা তাদের মনে রাখতে হবে।এইটা পেতে গেলে- বড় মাপের আন্দোলন করতে হবে,নতুন করে দমন নীপিড়ন হবে,এমনকি দেশ বড় আকারের গৃহযুদ্ধের মুখেও পড়তে পারে।
আমাদের দেশ সেই ধাক্কা সামাল দিতে পারবে তো?
একথা ঠিক যে,কথিত সংস্কারের নামে অনেক সময় ক্ষেপন করা হচ্ছে।যা,আমলাতন্ত্রকেও হার মানিয়েছে।
এখানে শ্রীলংকার উদাহরন বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।তাদের দেশেও একটা গন অভ্যুত্থান হয়েছিল।এরপর ক্ষমতাসীনরা পালিয়ে গেলেও পরে সেনাপ্রধানের ডাকে দেশে ফিরে আসে।তবে এসেই তারা ক্ষমতা ফেরত চায়নি।রাজাপাক্সে আর তার দল এবং সব রাজনৈতিক শক্তি,ব্যবসায়ী আর সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে সম্পর্কিতরা অন্তর্বর্তীকালিন রনিল বিক্রমাসিংহ সরকারকে সমর্থন দেয়।
এই সরকার তখন সবার সমর্থনে দেশ পরিচালনা করে অনেক কিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।মুল্যস্ফীতি +৭৫% থেকে কমিয়ে -৫% য়ে নামিয়ে আনে।
গন অভ্যুত্থানের কমিটমেন্ট অনুযায়ী দেশের অভ্যন্তরে থাকা লুটের টাকা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের কাজে লাগায়।এর জন্য তারা খুবই স্বল্প সময় নেয়,আর দুই বছরের মধ্যে সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে- ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
পক্ষান্তরে এই আটমাসে আমরা এর ভগ্নাংশও করে দেখাতে পারিনি।বাজার স্বাভাবিক করা দূরে থাক,ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোও ভাংতে পারিনি।এর কারন,এদের অনেকেই এখন রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েছে।লুট হওয়া একটি টাকাও ফেরত আনতে পারা দূরে থাক,দেশের ভিতরে থাকা লুটের বা অবৈধ অর্জিত টাকাগুলোও বাজেয়াপ্ত করতে পারিনি।
অনেকেই বলবেন,এই সব করতে গেলে তো, ওরা ব্যবসা বানিজ্য,অর্থনীতি অচল করে দেবে? তাছাড়া এসব বিষয়ে আমাদের সরকারের সদিচ্ছা বা জাতীয় ঐক্যমত্য নেই।কথাটা ঠিক নয়।রাষ্ট্রের হাত অনেক লম্বা।সেই তুলনায় এইসব সিন্ডিকেটের ক্ষমতা কিছুই না।রাষ্ট্র চাইলে সব কিছু করতে পারে।আর এইটা তো জনদাবী…?
রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদার মধ্যেও বৈপরীত্য আছে।কোন কোন দল প্রচলিত ধারার সাংবিধানিক প্রশাসন আর নির্বাচন ব্যবস্থা বহাল রেখে নির্বাচন চাইছে,আবার কেউ সংখ্যানুপাতিক (পি আর সিষ্টেমে) নির্বাচন চাইছে।
এই টানাপোড়েনে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে।জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে নতুন করে।রাজস্ব আয়ের একটি টাকাও উন্নয়ন ব্যয়ে সামিল করতে পারছি না।ধার করে উন্নয়ন ব্যয় অর্থ মেটাতে হচ্ছে।সরকারী ব্যয়ে কৃচ্ছসাধনের নাম গন্ধও নেই।এপ্রিল মাস যেতে বসেছে।অথচ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩৬%,যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন।
প্রফেসর ইউনুস সম্ভবত প্রচলিত উপদেষ্টা আর সরকারী কর্তাদের উপর ভরসা করতে পারছেন না।তাই বাইরে থেকে এক্সপার্ট হায়ার করছেন।
কিন্তু উনি কি বোঝেন না যে,এরা যতই পরিকল্পনা দিক,বাস্তবায়ন করতে হবে- উপদেষ্টা আর আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে।তাছাড়া এইসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন।সেই সময় উনি পাবেন কোথায়?
কথিত সংস্কারের নামে অযথা সময় ক্ষেপন হচ্ছে।তারা রাষ্ট্র বা নির্বাচন পরিচালনায় বেসিক কোন পরিবর্তন যে আনতে পারবে না,সেইটা নিশ্চিত করে বলা যায়।কারন,এই সংস্কারের সাথে জড়িত লোকগুলোকে আর তাদের শ্রেনীগত অবস্থান মানুষ জানে।
সংস্কারের জন্য উপযুক্ত সময় ছিল- ৫ আগষ্টের পর থেকে পরবর্তি একমাস।সেই ট্রেন আমরা মিস করেছি।
কেবল আফসোস,এতগুলো মানুষের জীবন দান আর পঙ্গুত্ব প্রায় বৃথা হয়ে গেল..
!
ফেসবুক থেকে মনের কথা সংগ্রহ