সিএজিতেই দুর্নীতি: টিআইবি
পক্ষকাল প্রতিবেদক: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি খোঁজার কাজে নিয়োজিত মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয় দুর্নীতি, ঘুষ ও রাজনৈতিক কারণে পিষ্ঠ হয়ে আছে। ফলে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা থাকলেও দুর্নীতি রোধের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডির মাইডাস টাওয়ারে সংস্থার কনফারেন্স রুমে ‘মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ কথা জানায় টিআইবি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি দিপু রায়। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল ও নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
দুর্নীতি ও সুশাসন নিয়ে গবেষণা করা আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি জানায়, সরকারি সব ধরনের অফিসের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করে দুর্নীতি খুঁজে বের করার জন্য মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় গঠন করা হয়েছে।
স্বায়ত্বশাসন দিয়ে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাংবিধানিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাহী আদেশে এর সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে রেখে দেওয়ায় কার্যত পরাধীনতা দেখা যায় সব কাজে। সব ধরনের কাজেই দেখা যায় রাজনৈতিক বিবেচনা ও ক্ষমতার প্রভাব।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ, পদন্নোতি ও অডিটের সব পর্যায়েই প্রবলভাবে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করে। প্রতিটি নিয়োগে লেনদেন হয় ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে টিআইবি জানায়, সম্প্রতি কার্যালয়ের ২য় শ্রেণির একটি পদে একজন ব্যক্তির নিয়োগের জন্য ৬ জন মন্ত্রী, ২ জন প্রতিমন্ত্রী, ১ জন সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা চাপ প্রয়োগ করেন সিজিএকে।
ঘুষ প্রদানের হার উল্লেখ করে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালে নিরীক্ষক ও জুনিয়র নিরীক্ষক নিয়োগ এবং ২০১২ সালে এডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল, রেলওয়ে ড্রাইভার, জুনিয়র নিরীক্ষক ও নিরীক্ষক পদে নিয়োগে ব্যাপক ঘুষ লেনদেন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগে ৩ থেকে ৫ লাখ, এডিজি নিয়োগে ৩ থেকে ৪ লাখ, রেলওয়ের ড্রাইভার নিয়োগে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা ও পদোন্নতিতে বিভিন্ন পদ অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠে আসে গবেষণায়।
অডিট নিরীক্ষায় ঘুষ লেনদেনের চিত্র তুলে ধরে টিআইবি জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি অফিসের নিরীক্ষায় মোটা অংকের অর্থের লেনদেন হয় রাজনৈতিক প্রভাবে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের নিরীক্ষায় ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার, বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার, বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পে ৫০ হাজার থেকে ২০ লাখ এবং প্রতিরক্ষা খাতে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনের চিত্র উঠে এসেছে।
রাজনৈতিক প্রভাবের প্রসঙ্গে টিআইবি জানায়, রাজনৈতিক প্রভাবে সরকারের পছন্দের লোক নিয়োগ পাওয়ায় সঠিক সময়ে নিরীক্ষা সম্পাদন হয় না। এক বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন ৪ থেকে ৫ বছর পর প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কিছু লোক নৈতিকভাবে কাজ সমধা করলেও ফল না হওয়ায় তারা পরবর্তী কাজে অবহেলা করেন।
প্রতিবেদনে রাজনৈতিক প্রভাব দূর করে সিজিএ কার্যালয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ২০ দফা সুপারিশ করে টিআইবি।