মঙ্গলবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » এসএসসি পরীক্ষা সর্বনাশা হরতালের কবলে
এসএসসি পরীক্ষা সর্বনাশা হরতালের কবলে
পক্ষকাল প্রতিবেদক বিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধের মধ্যে হরতালের মেয়াদ বাড়ায় এসএসসি পরীক্ষা আরও পিছিয়ে গেল।
ফেব্রুয়ারি বুধবার যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো নেওয়া হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ১০টায়।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই পরিবর্তিত সূচি তুলে ধরে পরীক্ষা শেষ করতে খালেদা জিয়া এবং ২০ দলের নেতাদের সহযোগিতা চান।
তিনি বলেন, “শুধু পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে তা নয়; শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতা ও চেতনায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যার খেসারত বহু বছর ধরে দিতে হবে।”
এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারির ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা একই কারণে পিছিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সময় রাখা হয়।
ফলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই এবারের এসএসসি ও সমমানের প্রথম পরীক্ষা হবে, যাতে অংশ নেবে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী।
পরিবর্তিত সূচিতে শুক্র ও শনিবার পরপর দুদিন দুটি বিষয়ের পরীক্ষায় বসতে হবে শিক্ষার্থীদের, যারা উৎকণ্ঠায় পড়ায় মন দিতে পারছে না বলে অভিভাবকরা জানিয়েছে।
সূচি বদলে যাওয়ায় শুক্রবার এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্র; দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবীদ এবং এসএসসি ভোকেশনালে বাংলা-২ (১৯২১) সৃজনশীল এবং বাংলা-২ (৮১২১) এর পরীক্ষা হবে। এসব বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত সোমবার।
আর শনিবার এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র, সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র; দাখিলে হাদিস শরিফ এবং এসএসসি ভোকেশনালে সকালে ইংরেজি-২ (১৯২২) এবং বিকালে ইংরেজি-২ (৮১২২) বিষয়ের পরীক্ষা হবে। এসব পরীক্ষা বুধবার হওয়ার কথা ছিল।
এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি না দিতে সরকারের আহ্বান নাকচ করে গত শুক্রবার অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি জোট। সেইসঙ্গে রোববার থেকে সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার হরতাল দেওয়া হয়, যার মেয়াদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আগের পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করে আশা করেছিলাম আর হরতাল দেবেন না। সবার মধ্যেও সেই মনোভাব ছিল।… বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এটা দুঃখজনক, জাতির জন্যও দুর্ভাগ্যজনক।”
এর ফলে পরীক্ষার্থীদেরই ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে পরীক্ষা দিতে যাবে। এটা তাদের আত্মবিশ্বাসের ওপর আঘাত করে।”
পাবলিক পরীক্ষার মধ্যে অবরোধ-হরতালের কর্মসূচি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও তিনি হুঁশিয়ার করে দেন।
নাহিদ বলেন, সরকার আশা করেছিল, ১৫ লাখ শিক্ষার্থী তাদের জীবনের সব থেকে বড় পাবলিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে দিতে পারবে। কিন্তু তা সম্ভব হল না।
“সকল রাজনৈতিক দলের কাছে, যে যেখানে আছেন তাদের কাছে আবেদন, পরীক্ষা বাধাহীন করে দেওয়া ন্যায়সঙ্গত দাবি। কিন্তু সেই দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি, এটা দুর্ভাগ্যজনক। আবার সেই হরতাল দেওয়া হয়েছে, তাই পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হল।”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট হরতালের কর্মসূচি আর বাড়াবে না- এমন আশা রেখে নাহিদ বলেন, “আমরা এখনো আশা রাখব মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ আছে সেটা তারা বিবেচনা করে কর্মসূচি আর বাড়াবেন না। আশা করি বোরবার থেকে সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।”
এ ব্যাপারে খালেদা জিয়া ও ২০ দলের সহযোগিতা চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি মাননীয় খালেদা জিয়ারও সহযোগিতা চাচ্ছি। তিনি ইন্সস্ট্রাকশন দেবেন যেন ছেলেমেয়েরা ভালমত পরীক্ষা দিতে পারে- ‘যে যেখানে আছ আমার দল ও ফ্রন্টের- তোমরা সহযোগিতা কর’।
“আমি আশা করি তিনি (খালেদা জিয়া) এই আহ্বান জানাবেন যে ‘পরীক্ষার দুইদিন তোমরা বিরক্ত করো না, আর বাকি দিনগুলোতও তোমরা পরীক্ষা দিতে দাও।”
শুক্র-শনিবারও হরতাল হলে কী হবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘অনুমানভিত্তিক’ আলোচনা করার কোনো প্রয়োজন নেই।
“আমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি আছে। আশা করছি পরবর্তী পরীক্ষার দিনগুলোতে তারা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাবেন। তাই অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো দরকার নেই।”
অন্যদের মধ্যে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সব-কমিটির সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।
ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়।
গত বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষাও পিছিয়ে যায়।