পোড়া মানুষের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে
পক্ষকাল প্রতিবেদক: বিএনপি-জামায়াতকে ৭১’র হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করে হরতাল-অবরোধের নামে সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের সময় পেট্রোল বোমায় নিহত এবং আহতদের যন্ত্রণার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘাতকদের ছোঁড়া পেট্রোল বোমায় এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষ পুড়ে মারা গেছেন। কয়েকশ’ মানুষ হাতাপাতালের বেডে অমানুষিক নরক যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন। পোড়া মানুষের গন্ধে বার্ন ইউনিটের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
শনিবার (ফেব্রুয়ারি ০৭) রাজধানীর একটি হোটেল ‘আন্তর্জাতিক রোটারি শান্তি সম্মেলন-২০১৫’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনকালীন সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতি কাটিয়ে দেশ যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত জোট আবার মানুষের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে। একাত্তরের কায়দায় হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে তারা। যুদ্ধাপরাধী আর সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বাঁচানোর জন্য এরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সেজন্য সাধারণ মানুষকে মেরে তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করতে চায়।
গোটা দেশের মানুষ পেট্রোল বোমা আতঙ্কে দুর্বিসহ সময় পার করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অমানবিক কাজ কারা করছে তা আপনারা জানেন; দেশবাসী জানেন। রাজনীতির নামে সাধারণ মানুষকে এভাবে পুড়ে মেরে ফেলার মত নৃশংসতা দেশবাসী আগে আর কখনও দেখেনি।
তিনি বলেন, রাজনীতি তো সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কী অর্জন করতে চায়? তারা কার জন্য সহিংস রাজনীতি করছে?
সহিংসতা বন্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস সাক্ষী দেয়, বাঙালি জাতি কখনই উৎপীড়কদের কাছে মাথানত করেনি। অন্যায়ের কাছে কখনও পরাজয় মানেনি। এবারও মানবে না। এ হিংস্র হায়েনাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা রুখবোই। এদের পরাজিত করেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করবো, ইনশাল্লাহ।
বাঙালি জাতি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দারিদ্র্য, ক্ষুধা, শোষণ ও নিপীড়ন থেকে মুক্তিলাভের মধ্য দিয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর এ দর্শনের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জতির পিতার সেই দর্শনের উপর ভিত্তি করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ক্ষুধা, দারিদ্র, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য আমরা জাতিসংঘে ‘অহিংসা ও শান্তির সংস্কৃতি’ বিষয়ক প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছি।
সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময়ই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন যাতে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে অন্যকোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা পরিচালনা করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রোটারির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আত্মস্বার্থের উর্ধ্বে সেবা’ এই ব্রতের মাধ্যমে উজ্জীবিত হয়ে রোটারি সামাজিক উন্নয়ন ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক খাতে রোটারি প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে।
সমাজ থেকে নিরক্ষরতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং কূপমণ্ডুকতা দূর করে শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার কাজে সমাজের বিত্তবান, শিক্ষিতদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
রোটারিয়ানরা ধনী-গরিব, যোগ্য-অযোগ্য, ক্ষমতাবান ও ক্ষমতাহীনের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিকারী দেয়াল অপসারণ করে সারাবিশ্বের শান্তির জন্য কাজ করে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।