সোমবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » » বিনা পয়সায় সৌদি যাবে মাসে ১০ হাজার কর্মী
বিনা পয়সায় সৌদি যাবে মাসে ১০ হাজার কর্মী
পক্ষকাল প্রতিবেদক : সৌদি আরবে গৃহস্থালীর কাজে প্রতি মাসে বিনা খরচে ১০ হাজার কর্মী যাবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তাদের সর্বনিম্ন বেতন হবে ১৫শ’ রিয়াল (প্রায় ৩২ হাজার টাকা)।
রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকায় সফররত সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপমন্ত্রী আহমেদ এফ আলফাহিদর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ সব কথা জানান।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি সরকারের সঙ্গে আমরা লংটার্ম কাজ করতে চাই। আমরা চাই না কোনো কারণে হঠাৎ দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাক। যেসব কর্মী যাবে আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, প্রয়োজনে তারাও দেবে।’
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালের পর সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল। এর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও বাজার গুটিয়ে নিয়েছিল। সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর লিডিংয়ে আছে। তাই সৌদি আরবের শ্রমবাজার উম্মুক্ত হলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যদেশগুলোও তাদের বাজার উম্মুক্ত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।’
ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘প্রতিমাসে সৌদি আরব ১০ হাজার গৃহকর্মী (পুরুষ ও নারী) নেবে। আর গৃহকর্মী বলতে শুধু ঘর মুছবে এমন নয়। ড্রাইভার, ম্যানেজারসহ ১০টি ক্যাটাগরিতে লোক যাবে। এছাড়া তাদের ৬টি মেগাসিটি হচ্ছে, সেখানেও লোক নেবে তারা। তাদের বেতন হবে মিনিমাম ১৫শ’ রিয়াল। এর নিচে লোক পাঠাব না- এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সৌদিতে সব লোকই প্রাইভেটভাবে যাবে। সৌদির নিয়োগকারী রিক্রুটিং এজেন্সি এ্যাম্বাসির মাধ্যমে আমাদের ডিমান্ড লেটার পাঠাবে। ডিমান্ড অনুযায়ী আমরা ক্লিয়ারেন্স দিলে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি লোক পাঠাবে।’
সৌদিতে যেতে কর্মীদের কত টাকা খরচ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমারা কর্মীদের কাছ থেকে এক টাকাও নিতে দেব না। সৌদি আরবে কর্মী যেতে কোনো টাকা পয়সা লাগবে না। শুধুমাত্র পাসপোর্টসহ অভ্যন্তরীণ আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা লাগতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সৌদিতে যদি জিরো কস্টে লোক পাঠানো যায় তাহলে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে। সৌদি সরকারও মনে করে- বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং হিসেবে থাকবে এবং তারা ভাল কাজ করতে পারে।’
এ সময় সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপমন্ত্রী আহমেদ এফ আলফাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কন্সট্রাকশনসহ সকল খাতে লোক নেওয়া হবে। কর্মীর যাওয়ার খরচ নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বহন করবে।’
কী পরিমাণ লোক নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘গত বছর সারাবিশ্ব থেকে ১.৩ মিলিয়ন লোক সৌদি সরকার নিয়েছে। এ বছরও আমাদের এ পরিমাণ লোকের চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
সকাল ৯টায় শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় ১০টায়। ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার, জনশক্তি রফতানী ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহার, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জ্যোতির্ময় দত্ত, মো. নুরুল ইসলামসহ প্রবাসী কল্যাণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সৌদি আরবের পক্ষে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপমন্ত্রী আহমেদ এফ আলফাহিদ ছাড়াও দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিলাটেরাল রিলেশন্স-এর ডিজি মোহাম্মদ আল শারেখ, ইমপ্লয়ী সুপারবিশন-এর ডিজি আব্দুল আজিজ আল হার্বসহ দেশটির সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চারদিনের সফরে রবিবার দুপুর ১২টায় ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল রবিবার দুপুর ১২টায় ঢাকায় আসেন।
দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর বন্ধ থাকার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে সৌদি সরকার। ওইদিন সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক ফ্যাক্স বার্তায় জানান, সৌদি আরবের রাজকীয় সভা ওই দিন বাংলাদেশের ওপর থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এ দেশটিতে শ্রমিক পাঠাতে আর কোনো বাধা নেই।
ওই সময় জানান হয়, সৌদি আরবে নতুনভাবে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির সরকারি একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবেন। তারই ফলশ্রুতিতে রবিবার ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরব বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার। দেশটিতে ২০ লাখের বেশী বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশী শ্রমিক নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সৌদি আরব।