বিএনপি চলে লন্ডনের ফোনে
পক্ষকাল প্রতিবেদক : হরতাল-অবরোধসহ চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অনেক কিছুই জানেন না বিএনপির সিনিয়র নেতারা। দল চলছে ‘লন্ডনের ফোনে’। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও লন্ডন থেকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানই চলমান সব কর্মসূচির সমন্বয় করছেন। মাঠের নেতা-কর্মীরাও এতে খুশি। অবশ্য আস্থাভাজন কয়েকজন নেতার সঙ্গেও কর্মসূচি নিয়ে সলাপরামর্শ করেন বেগম জিয়া। অনেক ক্ষেত্রে ২০ দলের গুটি কয়েক নেতার সঙ্গেও বিভিন্ন মাধ্যমে কর্মসূচির বিষয়ে কথা বলেন তিনি। আগেভাগে সব নেতাকে জানানো হলে আন্দোলন কর্মসূচি ভেস্তে যেতে পারে- এমন আশঙ্কায় বিএনপির সর্বোচ্চ নেতৃত্বে এ বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করার কোনো পরিবেশও নেই বলে দাবি করেন তারা। ৩ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর ৫ জানুয়ারি পল্টনে জনসভা করতে বেরুতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ কর্মসূচির বিষয়টিও দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতাদের বড় অংশেরই অজানা ছিল। নয়াপল্টনে জনসভা করতে না দিলে টানা দুদিন হরতাল কর্মসূচির সিদ্ধান্ত ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে অবরোধের সঙ্গে হরতাল জুড়ে দেওয়ার বিষয়েও অবগত নন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এখন লন্ডন থেকেই আন্দোলন কর্মসূচির দিক নির্দেশনা আসছে বলেও জানা গেছে।
অনেককে না জানানোর যুক্তি তুলে ধরে দলের সিনিয়র এক নেতার দাবি, কর্মসূচির আগে সবাইকে দলীয় পরিকল্পনা জানানো হলে বিষয়টি আগেভাগেই ফাঁস হয়ে যায়। এতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কর্মসূচি বানচাল করার তৎপরতা চালায়। মাঠে কর্মসূচি বাস্তবায়নে বেগ পেতে হয়। সার্বিক দিক বিবেচনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুটিকয়েক আস্থাভাজন নেতার সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে কর্মসূচির সামগ্রিক দিক-নির্দেশনা আসে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকে। কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে আন্দোলনকে গতিশীল করার পরামর্শও দিচ্ছেন তিনি।
তৃণমূল নেতাদের মতে, চলমান কর্মসূচিতে সমন্বয় হচ্ছে। আন্দোলনে থাকা তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নিয়মিত বার্তা পাচ্ছেন। সরাসরি তারেক রহমান তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। ফোন বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে নিয়মিত বিএনপি চেয়ারপারসনও মাঠের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতেন। মূলত, খালেদা জিয়ার ওই নির্দেশনা অনুযায়ীই মাঠের আন্দোলন চলছে। এক্ষেত্রে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এখনো ধারাবাহিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন তারেক রহমান। তাই নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অনড় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আন্দোলন সফল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চেয়ারপারসনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ এখন অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তাই কর্মসূচি কোথা থেকে কীভাবে আসছে তা আমরা আগেভাগে অনেক কিছুই জানি না। অবশ্য এ জন্য বর্তমান পরিস্থিতিই দায়ী। এতে সিনিয়র নেতারা হতাশ নন বলেও জানান ওই নেতা।
দলের মধ্য সারির এক নেতা বলেন, বিএনপির সিনিয়র নেতারা অনেক কিছু না জানলেও আন্দোলনে থাকা মাঠের নেতা-কর্মীরা কর্মসূচির বিষয়ে সবকিছুই জানছেন। ঢাকার নেতারা মাঠে না থাকলেও তৃণমূলের নেতারা খালেদার আহ্বানে সাড়া দিয়ে টানা অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা থেকে সারা দেশকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার অবদান মাঠের নেতা-কর্মীদের। সময়-সুযোগ এলে মাঠের নেতাদের মূল্যায়নেও বেগম জিয়া পিছপা হবেন না বলে জানান তিনি।
সারা দেশে বিএনপির বিক্ষোভ আজ আসছে আবারও হরতাল : সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে অবরোধের সঙ্গে আজ ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। রাজধানীতে থানা পর্যায়ে, সারা দেশে জেলা-উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে এ কর্মসূচি পালিত হবে। এদিকে অবরোধের সঙ্গে আগামীকাল থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি জোট। সপ্তাহের দ্বিতীয় দফায় আরও ৪৮ ঘণ্টা হরতাল দেওয়া হতে পারে। তবে ঘেরাওসহ বিকল্প নানা কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা চলছে।
এদিকে ২০ দলের পক্ষে গতকাল দুপুরে এক বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ ও দখলবাজ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জনগণ আইন অমান্য ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হবে। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রশক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ক্রসফায়ারে হত্যার কৃতিত্ব দাবি করে বেড়াচ্ছেন।’ তিনি বলেন, নেতা-মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি গণকারফিউ ও গণপিটুনিতে নির্ধারিত হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখনো সময় আছে, একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের উন্মাদনা ও ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে সরে আসুন। গণদাবি মেনে নিয়ে দ্রুত পদত্যাগ করুন। দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করুন।’