মঙ্গলবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » ডিসিসি নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে বলেছে সরকার
ডিসিসি নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে বলেছে সরকার
পক্ষকাল প্রতিবেদকঃ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে ভোটের উদ্যোগ নিতে বলেছে সরকার, যা গত আট বছর ধরে ঝুলে আছে।
সীমানা জটিলতাসহ নানা কারণে আটকে থাকা স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনের বিষয়টি গত দুই সপ্তাহে ধরে মন্ত্রিসভার আলোচনায় উঠছে বলে গণমাধ্যমের খবর।
সোমবার দুপুরেও মন্ত্রিসভায় এনিয়ে আলোচনার পর বিকালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সীমানা নির্ধারণের গেজেট নির্বাচন কমিশনে পাঠায় স্থানীয় সরকার বিভাগ।
গেজেটের সঙ্গে একটি চিঠিও আসে, যাতে নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয় বলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম প্রতিদিন বিকালের মধ্যে কার্যালয় ছাড়লেও এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলেন। গেজেট ও চিঠি আসার পরই পৌনে ৬টায় তারা বাসায় ফেরেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন সচিব এ নিয়ে কথা বলবে। আমি যথাসময়ে আপনাদের জানাব।”
সচিব বলেন, “স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুরোধ আমরা পেয়েছি। কমিশন এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের লাগাতার অবরোধ-হরতালের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের দিকে এগোতে সরকারের নির্দেশনা এসেছে।
বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা বলে আসছেন, এতদিন না দিলেও এখন আন্দোলন থেকে জনগণের চোখ ফেরাতেই ডিসিসি নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার।
মন্ত্রিসভার গত সপ্তাহের বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হককে ডিসিসি উত্তরে এবং সাবেক মেয়র মো. হানিফের ছেলে সাঈদ খোকনকে ডিসিসি দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবর।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ডিসিসি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছেন। আন্দোলনে থাকা বিএনপি এই নির্বাচন নিয়ে এই মুহূর্তে অনাগ্রহী বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
অবিভক্ত ডিসিসির শেষ নির্বাচিত মেয়র ছিলেন বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা। ২০০৭ সালে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর নির্বাচন হয়নি। ২০১১ সালে ডিসিসিকে দুই ভাগে ভাগ করার পর অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে চলছে দেশের বৃহত্তম দুই নগর কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম।
২০০৭ সালে মেয়াদ শেষের পর এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিয়েও এই নির্বাচন করতে পারেনি। এজন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে দায়ী করেন ওই সময়ের নির্বাচন কমিশনাররা।
কাজী রকিব নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরও ডিসিসিতে ভোটের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে তারা এই নির্বাচনের বিষয়ে ক্ষান্তও দিয়েছিল।
তবে সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশের পর এখন নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে আর বাধা থাকল না।
এপ্রিল-মে নিয়ে ইসির ভাবনা
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকলেও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে ভোটের ব্যয়ের জন্য এই অর্থবছরেই আলাদা বরাদ্দ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চেয়ে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন।
তখন ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যদি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন দেখা দেয়, সেজন্য আগাম অর্থ চেয়ে রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় আলোচনা ও সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী এপ্রিল ও মে মাসকে এই নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় ভাবছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার ফাঁকে ভোট করতে আপত্তি নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে মে মাস ফাঁকা রয়েছে। জুন মাসে শুরু হবে রোজা।
তবে চলতি মাসে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষা ইতোমধ্যে হরতাল-অবরোধে জটিলতায় পড়েছে। কয়েকটি পরীক্ষা ইতোমধ্যে পেছানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান সিইসির সঙ্গে দেখা করেন। তখন তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, পরীক্ষার মধ্যে ভোট নিয়ে তাদের আপত্তি নেই।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, ডিসিসি নির্বাচনের আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। পরীক্ষা সূচি ও রমজানকে মাথায় রেখেই ভোটের সময় নির্ধারণ করা হবে।
ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতির পাশাপাশি পরীক্ষা ও রমজানের সূচি বিবেচনায় নিয়ে ডিসিসি ভোটের সময়সূচি নির্ধারণ করবে ইসি।”
ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সম্ভাব্য বাজেট চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দিয়েছেন তারা।
এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হরতাল-অবরোধের কারণে তো পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে, পরীক্ষা পিছিয়ে কতদূর যায় তা তো বুঝতে পারছি না। যেখানে গিয়ে পৌঁছে, তখন এডজাস্ট করে চিন্তাভাবনা করতে হবে।”
মধ্য জুনে রমজান শুরুর বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এপ্রিল-মে’র মধ্যে নির্বাচনটা করতে হবে। পরীক্ষা পিছিয়ে কতদূর যায় তার ওপরও নির্ভর করছে।”
জুনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিকল্পনাও রয়েছে ইসির। এর আগে ডিসিসি করতে না পারলে তা বিলম্ব হতে পারে আবারও।