শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » রায়পুরে অসাধু কাজির যোগসাজসে বাল্য বিয়ের ছড়াছড়ি
রায়পুরে অসাধু কাজির যোগসাজসে বাল্য বিয়ের ছড়াছড়ি
রুবেল হোসেন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ৭নং বামনি ইউনিয়নে গত এক বছর ধরে বাল্য বিয়ের মহামারী আকার ধারণ করেছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিদের যোগসাজসে অত্র ইউনিয়নে বাল্য বিয়ে বেড়েই চলেছে। জানা গেছে সরকার ঘোষিত আঠার বছর বয়সের নিচে কোন মেয়েকে বিয়ে দেয়া আইনত অপরাধ। তথাপিও এলাকার অসাধু কাজি মোটা অংকের উপঢৌকন নিয়ে নিজেই জন্মনিবন্ধনে ঘষামাজা করে বয়স বাড়িয়ে বাল্য বিয়ে দেয়ার মত জঘৃণ্য কাজ করে যাচ্ছেন। এসব বাল্য বিয়ের হোতা ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বরে অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কাজি আলমগীর হোসেন। তিনি অত্র ইউনিয়নের বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও আল আরাফাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপার বিধায় দাপটের সাথে বাল্য বিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ সাধারণ জনগণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অত্র ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মনির হোসেনের মেয়ে সুরভী আক্তার যার প্রকৃত জন্ম তারিখ ০১/০৩/১৯৯৯, ২নং ওয়ার্ডের জমাদ্দার বাড়ির সফিকুল ইসলামের মেয়ে শাহানাজ আক্তার, ৪নং ওয়ার্ডের সেকান্দর আলীর মেয়ে পলি আক্তার, ১নং ওয়ার্ডের নূর হোসেনের মেয়ে রেহেনা আক্তার যার জন্ম ১৯৯৯ইং, ৩নং ওয়ার্ডের বাবুল হোসেনের মেয়ে ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া শাহনাজ আক্তার (জন্ম- ১৩/১২/১৯৯৯), ৩নং ওয়ার্ডের ওহিদ মিয়ার মেয়ে শারমিন আক্তার (জন্ম- ২৪/১২/১৯৯৮), ৮নং ওয়ার্ডের বেগেগো বাড়ির জান্নাত (জন্ম- ০১/০১/১৯৯৯), ৩নং ওয়ার্ডের স-মিল এর পূর্ব পাশের বাড়ির মিন্টু মিয়ার মেয়ে রুনু আক্তার, ০১ নং ওয়ার্ডের মৌলভী এইয়াকুব সাহেবের বাড়ির তোফায়েল আহম্মেদের মেয়ে পিংকি আক্তার, ০২নং ওয়ার্ডের জমাদ্দার বাড়ির আবুল খায়েরের মেয়ে সোহাগী বেগম, বামনীর সেকান্তর আলীর মেয়ের পলি আক্তার, বরম উল্যা বেপারী বাড়ির দিন মজুর আবদুল কাদেরের মেয়ে জান্নাত আক্তার (জন্ম- ০৯/০১/১৯৯৮) সহ আরো অসংখ্য অপ্রাপ্ত বয়সি মেয়েকে বিয়ে পড়িয়েছে অসাধু আলমগীর কাজী। এরা সবাই সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রী বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে বরম উল্যা বেপারী বাড়ির জান্নাত আক্তারের বাল্য বিয়ের কথা শুনে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আলম বিয়ে বন্ধের জন্য লোক পাঠান। এছাড়াও এনজিও কর্মী প্রতিভা রাণী নাথ এবং এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিগণ উক্ত বিয়ে বন্ধের জন্য আসলে কাজী আলমগীর হোসেন কাবিন বিহীন বিয়ে পড়িয়ে পালিয়ে যান। আরো উল্লেখিত বাল্য বিয়ের মধ্যে গুরুত্বর রেহানা আক্তার ও পিংকি আক্তার। তাদের মধ্যে রেহানা আক্তারের বয়স ইউনিয়নের জন্ম নিবন্ধন বইয়ে ১২৪নং পাতায় প্রকৃত জন্ম সাল ছিল ১৯৯৯ইং। তা কাটা ছেঁড়া করে ১৯৯৫ করা হয়। কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে বন্ধনে আবন্ধ করায় তারা স্বামীর সাথে সামঞ্জ্য বজায় রাখতে না পারায় বর্তমানে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পথে। এদিকে মেয়েদের অভিভাবকরা বার বার আলমগীর কাজীর কাছে গিয়েও কাবিন নামা পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। সে নানা অজুহাত দেখিয়ে চটকে যান। এছাড়াও আলমগীর কাজির বিরুদ্ধে ত্রাণ, রিলিফের মাল আত্মসাৎ সহ নানা অভিযোগে রায়পুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী।