এবার মুখোশের আড়ালে বোমাবাজি
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ বিএনপি জোটের অবরোধ শুরুর পর পেট্রোল বোমা কিংবা হাতবোমা হামলার অসংখ্য ঘটনা ঘটলেও এবার মুখোশ পরে বোমাবাজি দেখা গেছে রাজধানীতে।সোমবার বিজয় নগরে দুটি প্রাইভেটকার পোড়ানোর আগে দুর্বৃত্তরা হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। তখন দুর্বৃত্তদের কয়েকজনকে মুখোশ পরা দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।গলি থেকে হঠাৎ বেরিয়ে ১০/১২ জন যুবক প্রথমে প্রাইভেটকার দুটির সামনে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়, এরপর আগুন ধরিয়ে দেয়।আল আমিন নামে একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে তিন-চারজন ছিল মুখোশ পরা।গত ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধ এবং ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে তার সঙ্গে হরতালের মধ্যে বোমাবাজির অসংখ্য ঘটনা ঘটলেও মুখোশ পরে হামলা রাজধানীতে এটাই প্রথম।অবরোধ-হরতালে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর পর অপরাধীদের এই তৎপরতা দেখা গেল।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দিতেই দুর্বৃত্তরা এখন মুখোশের আড়ালে বোমাবাজিতে লিপ্ত হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন বিভিন্ন স্থানে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হচ্ছে দুর্বৃত্তদের। সম্ভবত এ কারণেই নিজের পরিচয় এড়াতে নতুন কৌশল হিসাবে মুখোশ পরছে তারা।”
আগের দিন রোববার সন্ধ্যায় মৌচাকে দেশ টিভির কার্যালয়ের সামনে ১০/১২টি হাতবোমা বিস্ফোরণ এবং তিনটি গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা, যা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
এর আগে কয়েকটি বোমাবাজির ঘটনাও ধরা পড়ে পুলিশেরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে থাকা সিসি ক্যামেরায়। তার ভিত্তিতে কয়েকজন অপরাধীকে সনাক্তের কথাও জানিয়েছিল পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে দুর্বৃত্তরা এখন আগের মতো তৎপরতা চালাতে পারছে না বলেও দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অবরোধের প্রথম দিকে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন পরিবহনে পেট্রল বোমা হামলা চালাত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে তারা এখন সেই কাজটি করতে পারছে না।”
অবরোধ শুরুর পর প্রথম দিকে পেট্রোল বোমা হামলা এবং তাতে প্রাণহানির কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও মাস গড়ানোর পর তা কমে আসছিল।
তবে গত কয়েকদিনে নাশকতা আবার বেড়েছে এবং এখন হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা বেশি ঘটছে। এতে গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে একজন মারাও গেছেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কে গণপরিবহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এখন চোরাগুপ্তা হামলার পথ বেছে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এখন দুই-একটি এলাকায় চোরাপথে হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে তারা।
“তারা এভাবে জনগণের মনে আতঙ্ক তৈরি করতে চাইছে। তবে পুলিশ জনগণের পাশে আছে, দুর্বৃত্তরা আতঙ্ক ছড়িয়ে কোনো লাভ করতে পারবে না,” বলেন উপকমিশনার মাসুদ।
মাঝে কিছুদিন বিরতি থাকলেও গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরপর তিন দিনে রাজধানীতে অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে সোমবার রাতে আগুন দেওয়া হয় এই বাসে
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে সোমবার রাতে আগুন দেওয়া হয় এই বাসে
পুলিশের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গত এক মাসে অবরোধ ও হরতালে সারাদেশে পেট্রোল বোমায় প্রায় ২০০টি গাড়ি পুড়েছে। সব মিলিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে ৫ শতাধিক গাড়িতে। ভাংচুর হয় আরও ৫ শতাধিক।
এসব ঘটনায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬৫ জন বলে পুলিশের হিসাব; এর মধ্যে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হযে ৪৫ জন মারা যান। পেট্রোল বোমায় দগ্ধ এবং বিভিন্নভাবে আহত হন প্রায় এক হাজার। এর মধ্যে হাতবোমায় আহতের সংখ্যা ৩৪৬ জন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত এক মাসে হাতবোমা বিস্ফোরণে দুই হাজারেরও বেশি ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় আহতদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বোমার স্প্লিন্টারে আহত প্রায় ৪০০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বাড্ডা, শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, বনানী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, আদাবর, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, গেন্ডারিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
এইসব হাতবোমা হামলায় আহত হয়ে গত দুই সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত এক সপ্তাহে হাতবোমা হামলার শিকার হয়ে ওই হাসপাতালে অন্তত ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরে নাশকতার ঘটনা কমে এলেও জেলাগুলোতে ঘটনা ঘটছে বেশি।
গত একমাসে দেশে পুলিশের সাতটি রেঞ্জে প্রায় অর্ধশত জন নিহত হন। একই সময় মহানগরগুলোতে নাশকতায় নিহতের সংখ্যা ১০ জন।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাশেষে কমিটির সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, “যেভাবে দেশে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করা হয়েছিল। তা দিন দিন কমে আসছে এবং পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে।”