তিস্তা চুক্তির জট খুলতে মোদিকে চিঠি মমতার
তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে সমস্যার সুরাহা চেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত এ চিঠিতে মমতা বোঝাতে চেয়েছেন তিনি তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির বিরোধী নন।
ঢাকা সফর থেকে ফিরে লেখা এই চিঠিতে মমতা জানিয়েছেন, এই চুক্তি নিয়ে জট কাটাতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে সহযোগিতা করতে চান।
বুধবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সবকিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলেই ঢাকা সফরে আগ্রহী ভারতের প্রধানমন্ত্রী। মোদি’র এ ইচ্ছার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনার কাছে এরই মধ্যে একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সফরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মোদি।
শেখ হাসিনাকে মোদি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই ঢাকায় যেতে চান তিনি।
১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লিতে হাসিনার সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি করার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে সঙ্গে রেখেছিলেন, তিস্তা চুক্তিতেও মমতাকে ঠিক একইভাবে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাইছেন মোদি। এই নীতি মেনেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়াতেও তিনি তামিলনাড়ুকে সঙ্গে রাখছেন।
বাংলাদেশ থেকে ফিরেই মমতা নিজে তার সফরের খুঁটিনাটি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, তার সফর ইতিবাচক হয়েছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে তিনি যে হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছেন, সে কথাও প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে ভোলেননি মমতা।
মমতা লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ পানিবণ্টন নিয়ে দু’পক্ষেরই কিছু দাবি-দাওয়া রয়েছে। এই চুক্তি নিয়ে যে জট পেকেছে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান সম্ভব। এ বিষয়ে সহযোগিতার প্রস্তাবও দিয়েছেন মমতা।
দিল্লির সরকারি সূত্র বলছে, মমতার এই চিঠির পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত গ্রহণে আর কোনও বাধা থাকবে না।
এতদিন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাক্যালাপটুকুও সযত্নে এড়িয়ে এসেছেন মমতা। সম্প্রতি মোদির ডাকা এক বৈঠকে তিনি নিজে তো যাননি, রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিও পাঠাননি। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্তে কোণঠাসা মমতা তার এক সময়ের ডান হাত মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হতেই সুর পাল্টেছেন। চেষ্টা করছেন মোদির সঙ্গে দূরত্ব কমাতে।
ঢাকা সফরের আগে দিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সম্মানে দেওয়া প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নৈশভোজে মোদির মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা। অনেকের মতে, মোদির সঙ্গে দেখা করতেই সে যাত্রা দিল্লিবাসের মেয়াদ বাড়িয়েছিলেন তিনি। এরপর অতি সম্প্রতি মোদির সঙ্গে বৈঠকের জন্য সময় চেয়েছেন মমতা। এমন প্রেক্ষাপটে তিস্তা নিয়ে মমতার চিঠি তার নরম অবস্থানের আরও একটি উদাহরণ বলে মনে করা হচ্ছে। তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও আশার আলো দেখছে দিল্লি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের মতে, মমতার এই চিঠির পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত গ্রহণে আর কোনও বাধা থাকবে না।
মমতা ঢাকায় থাকাকালেই এক রকম আলোচনা শুরু করে দিয়েছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার। চলতি সপ্তাহেই ঢাকায় পৌঁছে তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জয়শঙ্কর। মঙ্গলবার ঢাকা জানিয়েছে, এ বিষয়ে দিল্লির তৎপরতায় তারা সন্তুষ্ট।
আগামী বছর মে মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ভোট হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে মমতা তিস্তা চুক্তির বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিতে পারেন বলে কূটনীতিকদের একটা অংশ মনে করছেন। আবার কারও কারও ধারণা, কলকাতা ও অন্য পৌর নির্বাচনগুলোতে সাফল্য এলে মমতা নির্ধারিত সময়ের আগে এ বছরের শেষেই বিধানসভা ভোটে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আরও আগেই তিনি এই চুক্তিতে রাজি হয়ে যেতে পারেন।
তবে দিল্লির কূটনৈতিক মহলের একটি অংশ বলছে, ভোটের সঙ্গে বিষয়টির কোনও সম্পর্ক নেই। মমতা এ বছরেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিতে পারেন।
এবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন। দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজেও মমতার সঙ্গে ডোভালের বাংলাদেশ নিয়ে কথা হয়। মমতার বক্তব্য, তিস্তার পানির ভাগ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হোক। এই আলোচনার মাধ্যমেই একটি সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছনো যাবে।
মমতার অভিযোগ, এর আগে ইউপিএ আমলে চুক্তির খসড়া তৈরির সময়ে দেশের নিরাপত্তার যুক্তি তুলে রাজ্যের প্রয়োজনের বিষয়টি খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল।