‘টাকার বদলে লাঠির আঘাত পেয়েছি’
পক্ষকাল প্রতিবেদক : বকেয়া বেতনের টাকা চাইতে গিয়ে, টাকা তো নয়ই- উল্টো লাঠির আঘাত পেয়েছি। বাসায় দুধের সন্তান রেখে গার্মেন্টসে কাজ করি। কিন্ত মাস শেষে টাকা পাই না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার আজিম গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিক রেহেনা আক্তার।
তিনি বলেন, পুরো মাস পরিশ্রম করি। কিন্তু বেতন ঠিক মতো পাই না। টাকা না থাকায় বাসা ভাড়াও দেওয়া হয়নি। এনিয়ে বাড়ির মালিক অকথ্য ভাষায় কথাবার্তা বলছে। কিন্তু মালিকরা আমাদের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে আনন্দ ফুর্তি করছেন।
শুধু রেহেনাই নয়, তার মতো আরো অনেক শ্রমিকই এভাবে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন।
দুপুরে দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামলে তাদের লাঠিপেটা করেন মালিকপক্ষের লোকজন। এতে তৈরি পোশাক শ্রমকি খোরশেদ, মুন্নী, রেহেনা, চাঁদনী, খুঁশিসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন।
আহত রেহেনা জানান, তিনি এই কারখানায় অপারেটর হিসাবে কাজ করেন। গত দুই মাস ধরে মালিকপক্ষ তাদের বেতন ভাতা দিচ্ছেন না। টাকা চাইতে গেলে নানা টাল বাহানা করে মালিকপক্ষ। তার ভাষায়, সবাই মিলে বেতন চাইতে গেলে মালিকের লোকজন আমাদের লাঠি পেটা করে।
তার সঙ্গে আরেক শ্রমিক চাঁদনী (অপারেটর) বলেন, পেটে ক্ষুধার জ্বালা, এরমধ্যে আবার মালিকের লোকজনের লাঠির আঘাত। আমাদের মতো গরিবদের কেউ ভালো নজরে দেখে না।
‘মালিকের সব চলে কিন্ত শ্রমিকের বেতন দেওয়ার সময় নানা সমস্যা’ – অভিযোগ করেন তিনি।
আর এ কথা শুনেই শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। এনিয়ে মালিকপক্ষের লোকজনের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
তবে তার কথার প্রতিবাদ করে আকলিমা (হেলপার) বলেন, আপনি বেতন পান ১২ হাজার টাকা। আমরা পাই তিন হাজার টাকা। তাও আবার সময় মতো দেন না, কীভাবে সংসার চলবে?
কারখানার সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, প্রায় প্রতি মাসেই বেতন দিতে গড়িমষি করে মালিক। বেতন চাইলে উল্টো অকথ্য ভাষায় কথা বলে।
যোগাযোগ করা হলে আজিম গার্মেন্টস লিমিটেডের মালিক মেজবাউল আজিম সনেট বলেন, শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ করছিল। সোমবার ব্যাংক খুললে তাদের বেতন পরিশোধ করা হবে।
তবে শ্রমিক নির্যাতন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তেজিত মেজবাউল আজিম বিষয়টি এড়িয়ে যান।
আজিম গার্মেন্টসের ভবন মালিক মালিক হাজী মো. মিয়া হোসেন অভিযোগ করেন, প্রায়ই শ্রমিকদের বেতন নিয়ে টালবাহানা করেন এই কারখানার মালিক। আমার ভাড়াও সময় মতো দেন না।
রাতের আঁধারে গার্মেন্টসের মেশিন অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।