‘আটজন মিলে সাত টুকরো করে সেই তরুণীকে’
পক্ষকাল প্রতিবেদক : রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে সুমির (২৩) সাত টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, আটজন ঘাতক মিলে ওই তরুণীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে নৃশংসভাবে সাত টুকরো করে হত্যা করে। হত্যার পর কেউ যাতে তাকে চিনতে না পারে সেজন্য তার মুখ আগুন দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়।
সোমবার দুপুরে পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানান মনিরুল ইসলাম।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মো. সাইদুল ইসলাম (২৭), হানিফ (২৬), রাতুল আহাম্মেদ (২৩), নুরুন্নবী শাওন (১৯), মো. সুজন (২৩) ও মো. সুমন তোতলা সুমন (২৪)। এসময় তাদের হেফাজত থেকে ১টি ছুরি, ১টি চাপাতি, কাগজের তৈরি বল (স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো) যা দিয়ে ভিকটিমের মুখ বন্ধ করা হয়, ১টি কাঠের গুড়ি (খাইট্টা) যার ওপরে ভিকটিমের হাত, পা রেখে কাটা হয়, কেরোসিন তেলের বোতল ও আসামিদের পরিহিত রক্তমাখা শার্ট ও প্যান্ট। ঘাতক আটজনের মধ্যে প্রথমে চারজন ও পরে আরো দুইজনসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এ ছাড়া অপর এক ঘাতক আসামি মোবারক হোসেন মন্টি র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আলম নামে অপর একজন ঘাতক আসামি এখনো পলাতক।
উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ দুপুর সোয়া ১টায় মতিঝিল থানা পুলিশ কালভার্ট রোডস্থ হোটেল উপবনের উত্তর পাশ থেকে মানুষের একটি হাত ও একটি পায়ের কাটা অংশ উদ্ধার করে। এর পর পুলিশ খোঁজাখুজির একপর্যায়ে পাশের ১৬৭/১ এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লি. ফকিরাপুলস্থ ওয়াসা ভবনের পাকা ওয়াল সংলগ্ন মাটি থেকে দুপুর পৌনে ২টায় অজ্ঞাত মনুষ্য সদৃশ একটি পা এবং একই ওয়াল সংলগ্ন ৫ গজ পূর্বে ময়লা আবর্জনার ওপর একটি হাত ও শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন একটি বাহু উদ্ধার করে। আশে পাশে খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির ওয়াসা ভবন মডস্ জোন-৬ এর পূর্ব পাশে হাফ বিল্ডিংস ওয়াসা স্টোর রুমের টিনের চালায় দুপুর সোয়া ২টায় একটি রক্ত মাখা সাদা বিছানার চাদর ও নীল রঙের নাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা মানুষ সদৃশ মস্তক, হাত-পা বিহীন একটি দেহ উদ্ধার করে। এরপর আবার বিকেল সোয়া ৩টায় ১৯৩/১ ফকিরাপুল আহসান মঞ্জিল এর ৭ম তলার সিড়ির মাঝখানে একটি মানুষ্য সদৃশ মস্তক আগুনে পোড়া, ঝলসানো ও ছাইকালী মাখা অবস্থায় উদ্ধার করে। অজ্ঞাত পৃথক পৃথক অঙ্গগুলো একত্রিত করে একটি মহিলা সদৃশ দেহের অবয়ব পাওয়া যায়। পরে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য অঙ্গগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে প্রেরণ করা হয়। ওই দিন উক্ত ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
মনিরুল ইসলাম জানান, সুমির স্বামী মাদক ব্যবসায়ী নাসির কয়েকদিন আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এর জন্য সাইদুল, সুজন, মন্টি, হানিফকে দায়ী করে বিভিন্ন স্থানে সুমি বলে বেড়ায়। অন্যদিকে আসামিরা ধারণা করে সুমি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে, তাই সে তাদেরও ধরিয়ে দিতে পারে। আর এ কারণে তারা সুমিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যার দিকে মন্টির বাসা আহসান মঞ্জিলের নিচ থেকে সুমিকে তারা মুখ চেপে ধরে ছাদে নিয়ে যায়। এরপর তার হাত-পা বেঁধে, মুখে কাগজ মুড়িয়ে স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। পরে মন্টি সুমিকে জোরপূর্বক ইয়াবা সেবন করায় এবং রাতভর নির্যাতন করে গলাকেটে হত্যা করে।
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘সাইদুল ও সুজন ছুরি দিয়ে সুমিকে জবাই করে। মোবারক হোসেন মন্টি চাপাতি দিয়ে সুমির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে। এরপর সুজন সুমির ডান পা কাটে, রাতুল বাম পা কাটে, সাইদুল ও সোহেল ডান হাত কাটে এবং আলম ছুরি দিয়ে সুমির পেটে আঘাত করে। সোহেল হাত দুইটি ওয়াসার খালি স্থানে ফেলে দেয়, সুজন পা দুইটি হোটেল উপবন ও মন্টির বাসার চিপায় ফেলে দেয়, সবাই মিলে সুমির দেহ চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে রশি দিয়ে ওয়াসার টিনশেড ঘরে টিনের ওপর ফেলে দেয়। এরপর সুমির মুখমন্ডল কেরাসিন দিয়ে ঝলসে দেয় কেউ যেন চিনতে না পারে।’
খুনীরা বিকৃত মানসিকতার কথা জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এরা এক ধরনের মানসিক বিকৃত সম্পন্ন লোক।’