মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৩ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৩ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
জাহাঙ্গীর আলম, চাটমোহর (পাবনা) :
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে পাবনা-৩ এলাকা (চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর) থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কিছু নতুন মুখ মাঠ সরগরম করে রাখলেও পাবনা-৩ নির্বাচনী এলাকায় এখন তাদের দেখা মিলছে না। দেশের চলমান অবরোধ হরতাল সম্পৃক্ত আন্দোলন সংগ্রামে তাদের অনুপস্থিতিতে হতাশ তৃণমূল বিএনপি নেতা কর্মীরা।
জানা যায়, ৫ জানুয়ারী-২০১৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন এর পূর্বে ভাঙ্গুড়ার রাজিউল হাসান বাবু, ফরিদপুরের সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান ফখরুল আজম, চাটমোহরের সাবেক এমপি কেএম আনোয়ারুল ইসলাম, হাসানুল ইসলাম রাজা ও সাবেক ব্যাংকার আবু সালেহ মোহাম্মদ মাজেদ বিএনপি নেতা কর্মীদের নিজেদের গ্রুপে সম্পৃক্ত করতে প্রতিযোগিতায় নামেন। বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন ও দলীয় মিছিল মিটিং এ তৃণমূল নেতা কর্মীদের সাথে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দেখা গেলেও নির্বাচনটি হয়ে যাওয়ার পর এলাকায় তাদের আসা যাওয়া কমে যায়।
দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততা হঠাৎ করেই কমে যায়। সে সময় থেকে দলের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেন। চাটমোহরের বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন গুলোর নেতা কর্মীরা মূলত চার ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
চাটমোহর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সেলিম রেজাকে ফখরুল আযমের সমর্থনে কাজ করতে দেখা যায়। ২০০৯ সালে চাটমোহর উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে দলের সভাপতি হিসেবে সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাবেক পৌর মেয়র প্রফেসর আব্দুল মান্নান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দলের হাল ধরেন অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কালু। এসময় তারা তিন জন একত্রে দলীয় কর্মকান্ড চালাতে থাকেন। এরপর ২০১২ সালের পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে সৃষ্টি হয় অনেক নাটকীয়তার। কে এম আনোয়ারুল ইসলাম পৌর সভার চেয়ারম্যান পদে হাসাদুল ইসলাম হীরাকে সমর্থন করলে প্রফেসর আব্দুল মান্নানের সাথে তার দূরত্বের সৃষ্টি হয়।
দলীয় কোন্দলের কারণে প্রফেসর আব্দুল মান্নান নির্বাচনে পরাজিত হন। হাসাদুল ইসলাম হিরা পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দলের মধ্যে শুরু হয় নতুন ভাঙনের। এমন সময় আবির্ভাব ঘটে আবু সালেহ মাজেদের। দল ক্ষমতায় গেলে তৃণ মূল নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয় না এমন অভিযোগে তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতা যোগদেন আবু সালেহ মাজেদের সাথে।
বিশিষ্ট শিল্পপতি হাসানুল ইসলাম রাজা এসময় চষে বেড়ান পাবনা- ৩ এলাকা। অনেক নেতা কর্মীদের এসময় নিজ গ্রুপে সম্পৃক্ত করেন তিনি। পারিবারিক অসুবিধার কারণে আবু সালেহ মাজেদ নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিলে হতাশায় নিমজ্জিত হন তার সমর্থকেরা। হোচট খেলেও সভাপতি হিসেবে তৃণমূলে থেকে দল গোছাতে থাকেন কে এম আনোয়ারুল ইসলাম।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম কালু এবং পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরোজ খান তার পাশে থেকে এ কাজে তাকে সার্বক্ষনিক সহায়তা করেন। দ্বিধা দন্দ্ব ভূলে প্রফেসর আব্দুল মান্নান ও এ সময় তাদের সাথে কাজ করেন। ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে ডেলিগেট ভোটে দলীয় প্রার্থী হন হাসাদুল ইসলাম হীরা। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আব্দুল মান্নান দলীয় প্রার্থী হিসেবে হাসাদুল ইসলাম হিরাকে সমর্থন দেন।
এ সময় অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কালুও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তাকে সমর্থন দেন উপজেলা বিএনপি সভাপতি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম। এসময় সাবেক এমপি কেএম আনোয়ারুল ইসলাম এবং অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কালুকে সাময়িক ভাবে বহিষ্কার করেন জেলা নেতৃবৃন্দ। নির্বাচন পরবর্তীতে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। দলে একের পর এক চলতে থাকে ভাঙ্গা গড়া। সর্বশেষ গত ২০১৪ সালে পৌরসভা উপ নির্বাচনে পৌর মেয়র প্রার্থী হন প্রফেসর আব্দুল মান্নান।
এ সময় পৌর ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক মনিরুল ইসলাম মনি এবং বিএনপি সমর্থিত তারা মিয়া ও মেয়র প্রার্থী হন। দলীয় কোন্দলের কারণে নির্বাচনে পরাজিত হন প্রফেসর আব্দুল মান্নান। এ ব্যাপারে প্রফেসর আব্দুল মান্নান জানান, “সর্বশেষ পৌর নির্বাচনের সময় উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হিরা ও তার বড় ভাই বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হাসানুল ইসলাম রাজা পৌর নির্বাচনে আমার পক্ষে আন্তরিকভাবে ভূমিকা রাখেননি।
অপরদিকে এ নির্বাচনে আবু সালেহ মাজেদ আমাকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন করেন এবং আমার পক্ষে কাজ করেন”। বর্তমান অবরোধ হরতাল চলাকালীন অবস্থায় পাবনা-৩ এলাকা থেকে দলটির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে না থাকায় হতাশায় রয়েছেন মাঠপর্যায়ের নেতা কর্মীরা।