শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪
প্রথম পাতা » » উদ্ধার অভিযানে বুয়েট দল
উদ্ধার অভিযানে বুয়েট দল
পক্ষকাল প্রতিবেদক:
রাজধানীর শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনি মাঠের পাশে একটি পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপে আটকা পড়া চার বছর বয়সী শিশু জিহাদকে উদ্ধারে চলছে রূদ্ধশ্বাস অভিযান।
পাঁচবার বিভিন্ন কায়দায় দড়ি ফেলেও ১৪ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় ভেতরে থাকা তিন ইঞ্চি ব্যাসের সাড়ে তিনশ ফুট দীর্ঘ একটি পাইপ ক্রেইন দিয়ে টেনে তুলে জায়গা করা হয়েছে।
ওই পথে তুলনামূলভাবে সরু নতুন একটি পাইপ ঢুকিয়ে শিশুটিকে উদ্ধারের একটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল।
তাদের সঙ্গে কথা বলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা বুয়েটের প্রস্তাবিত পদ্ধতিতেই চেষ্টা চালাতে চান। ইতোমধ্যে পাইপ কেটে ওই ‘ক্যাচার’ বানানোর কাজ শুরু হয়েছে।
বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আরাফাত ধ্রুব জানান, তাদের ওই পাইপের নিচের অংশে এমন ব্যবস্থা থাকবে যাতে সেটি নিচে পৌঁছে গুটিয়ে রাখা একটি অংশ খুলে দেবে শিশুটিকেসহ তা উপরে উঠিয়ে আনার ব্যবস্থা থাকবে।
শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য সেখানে ক্যামেরা ও আলোসহ বশির আহমেদ নামের এক স্বেচ্ছাসেবীকে নামানোর কথা ভাবা হলেও পরে নিরাপত্তার খাতিরে তা বাতিল করা হয়।
এদিকে ঘটনার নয় ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ওয়াসার ওয়াটার প্রুফ ক্যামেরা। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটিও পাইপে নামানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
জিহাদকে উদ্ধার করা সম্ভব হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা সম্বলিত একটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে প্রস্তুত রেখেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এ উদ্ধার অভিযানের ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেজর শাকিল নেওয়াজ।
টান টান উত্তেজনা নিয়ে টেলিভিশনে অভূতপূর্ব এই উদ্ধার অভিযান দেখছে সারা দেশের মানুষ। কয়েক হাজার উৎসুক জনতার ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে।
সন্ধ্যার পরও উদ্ধারকর্মীরা ওপর থেকে কয়েক বার চিৎকার করে ডেকে জিহাদের সাড়া পেয়েছেন। সে সময় দড়িতে বেঁধে তার জন্য দুধের বোতলও পাঠানো হয়। শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সিলিন্ডার থেকে গর্তে অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছে ।
শিশুটির বাবা নাসিরউদ্দিন মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নৈশ প্রহরী। ওই কলোনির ৪১ নম্বর বিল্ডিংয়ে তাদের বাসা।
নাসির সাংবাদিকদের জানান, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতে জিহাদ ওই গর্তে পড়ে যায়। একটি চটের বস্তা দিয়ে পাইপের মুখ ঢাকা থাকায় সে বুঝতে পারেনি।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাচ্চাটিকে উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করে। কিন্তু পাইপের ব্যস মাত্র ১৪ ইঞ্চি হওয়ায় তাদের কোনো চেষ্টায় এ পর্যন্ত সাফল্য আসেনি। পাঁচবারের মধ্যে চার দফা ওপর থেকে ফেলা দড়ি জিহাদ ধরতে পারলেও তাকে তুলে আনা যায়নি।
এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ক্রেইন দিয়ে টেনে ভেতরে থাকা সরু পাইপ টেনে তুলে কেটে কেটে সরিয়ে নেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, রেলওয়ে কলোনির পশে মাঠের ফাঁকা জায়গায় ওই গভীর নলকূপ দিয়ে ঠিকমতো পানি না ওঠায় তা পরিত্যক্ত করা হয়। খানিকটা দূরে পানি উত্তোলনের জন্য আরেকটি পাম্প বসানো হচ্ছে।
নাসিরের সহকর্মী আবদুল খালেক শুরু থেকেই সরাসরি উদ্ধার অভিযানে যুক্ত আছেন। তিনি জানান, এই গভীর নলকূপে উপরের দিকে ১৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ আছে একটি নির্দিষ্ট গভীরতা পর্যন্ত। তারপর রয়েছে মোটর ও ছাঁকনি। পাম্পের নিচ থেকে তিন ইঞ্চি ব্যাসের আরেকটি সরু পাইপ ৩০০ ফুটের বেশি নিচে চলে গেছে।
মাঝখানে ওই পাম্পের ওপরই জিহাদ রয়েছে বলে জানান খালেক।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবারও ওই গর্তে একটি শিশুর একটি পা ঢুকে যায়। কিন্তু আশেপাশের লোকজন তাকে দ্রুত সরিয়ে আনে।
তিন ভাই বোনের মধ্যে জিহাদ সবার ছোট। তার বড় ভাই জিসান ও স্বর্ণা। তাদের বাড়ি শরিয়তপুরের ডামুড্যায়।
এদিকে চার বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে আশঙ্কায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন জিহাদের মা খাদিজা বেগম। প্রতিবেশীরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে শিশু আটকা পড়ার খবরে বিপুল সংখ্যক মানুষ ওই এলাকায় ভিড় করেছে। পাশেই একটি ওয়াজে আসা হাজার খানেক লোক উদ্ধার তৎপরতা দেখতে জড়ো হয়েছেন সেখানে।টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে এই উদ্ধার অভিযানের দৃশ্য।
উৎসুক সাধারণ মানুষকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে শাহজাহানপুর থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান।
ওয়াসার মহাপরিচালক প্রকৌশলী তাকসেম এ খান, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকার পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী ক