বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল ২০১৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » যুদ্ধাপরাধীরা বাংলার মাটিতে ক্ষমা পায়নি,আগুন সন্ত্রাসীরাও ক্ষমা পাবে না : তথ্য মন্ত্রী
যুদ্ধাপরাধীরা বাংলার মাটিতে ক্ষমা পায়নি,আগুন সন্ত্রাসীরাও ক্ষমা পাবে না : তথ্য মন্ত্রী
পক্ষকাল ডেস্ক : রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আজ তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীরা যেমন বাংলার মাটিতে ক্ষমা পায়নি, তেমনি আগুন সন্ত্রাসীরাও যাতে ক্ষমা না পায়। তাদের বিচার করে ফাঁসির মঞ্চে পাঠাতে হবে।
গত ১৯ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের শুরুর দিন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দেন।
গত ২০ জানুয়ারি চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের ডা. দীপু মনি তা সমর্থন করেন।
ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ ৩৬তম দিনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সরকারি দলের নজরুল ইসলাম বাবু ও আবদুল মতিন খসরু আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি নিরপেক্ষ নই, আমি গণতন্ত্র ও সাম্যের পক্ষে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা কুড়িয়ে পাওয়া ধন নয়, স্বাধীন দেশের সবচেয়ে বড় অভিশাপ সামরিক সরকার ও জঙ্গি সমর্থক সরকার। আজ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার বিষয়। এদেশের সাথে বাংলাদেশ বিরোধীদের যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। এরকম একটি অবস্থায় অনেকে ভেবেছিলেন সিটি নির্বাচন ঘোষণার পর বেগম খালেদা জিয়ার মনে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু কোন পরিবর্তন আসেনি। তিনি নির্বাচনের কথা বলেছেন, অথচ আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো অব্যাহত থাকবে এটাও বলেছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বেগম জিয়া বুঝিয়ে দিয়েছেন, আগুন সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে এদেশকে ধ্বংস করবেন। নির্বাচন করলেও আগুন সন্ত্রাসীরা রেহাই পাবে না, যেমন যুদ্ধাপরাধীরা মাফ পায়নি। বেগম খালেদা জিয়া ভেবেছেন, ওনাকে কোলে করে কিংবা পালকিতে চড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। কিন্তু এটা হবার নয়।
তিনি বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে অনেকেই সংলাপের কথা বলছেন। সংলাপ গণতন্ত্রে হতেই পারে। সংলাপের একটি লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। সমঝোতার একটি ভিত্তি থাকা প্রয়োজন। খালেদা জিয়া নির্বাচনই একমাত্র সমাধানের পথ বলেছেন। কিন্তু আসলেই কি তাই? ইতিহাস কি তাই বলে। সেদিন তো নির্বাচন হয়ে গেলে। সে নির্বাচনে তিনি তো আসলেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে আনার জন্য তো অনেক ছাড় দিয়েছিলেন। সংলাপের প্রস্তাব দিলেও সেদিন উনি তা প্রত্যাখ্যান করে পুরনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোতে নির্বাচন চেয়েছিলেন। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর বিচারপতিদের নিয়ে পুরনো কাঠামোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়। এটা সবাই জানেন। খালেদা জিয়া নিজেও এটা জেনে এ প্রস্তাব করেছেন। তিনি নির্বাচন বা গণতন্ত্র চাননি। তিনি আসলে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা চেয়েছিলেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ৭ দফা দাবি দিয়েছেন। সেখানে নির্দলীয় সরকারের কথা বলেছেন। কিন্তু সরকারের কোন রূপরেখা দেননি। কিভাবে এ সরকার হবে এবং নির্বাচন হবে। এ ব্যাপারে কোন কথা বলেননি। তিনি জঙ্গি তাণ্ডবের জন্য ক্ষমা চাননি। এমনকি জঙ্গি সঙ্গ ছাড়ারও ঘোষণা দেননি। পক্ষান্তরে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির কথা বলেছেন। তিনি সংলাপ চান, কি কি বিষয়ে তিনি সংলাপ চান। স্থায়ী নির্বাচনের জন্য। না একটি নির্বাচনের জন্য। আগুন সন্ত্রাসী কিংবা খালেদা-তারেকের মামলার ব্যাপারে কিছু বলেননি।
তিনি বলেন, পোড়া মানুষকে সামনে রেখে শেখ হাসিনার সরকার বেগম খালেদা জিয়ার সাথে রাজনীতির লেন-দেন করতে পারে না। মানবের সাথে দানবের কোন সংলাপ হয় না। সংলাপ বা মিটমাট হতে পারে একটি বিষয়ে তাহলো রাজনীতি থেকে সন্ত্রাসের বিদায় অথবা বেগম খালেদা জিয়াকে কিভাবে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় দিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় পাঠানো যায়, সেটা নিয়ে সংলাপ হতে পারে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখন সংলাপের সময় নয়। জঙ্গি দমনের সময়। বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করুক আর না করুক। মানুষ পোড়ানোর দায় থেকে তাকে একচুল ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি সংলাপ পন্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা সংলাপ চান। কিন্তু আগুন সন্ত্রাসীদের কি হবে। কার সঙ্গে কার মিটমাট চান। গণতন্ত্রের সঙ্গে গণতন্ত্রের পার্টনারের মিটমাট হতে পারে। কিন্তু গণতন্ত্রের সাথে জঙ্গির মিটমাট হয় না। সংলাপ পন্থীরা কি জানেন না, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানীদের সাথে কোন মিটমাট হয়নি। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২০১৫ সাল পর্যন্ত খুনী চক্রের সাথে কোন মিটমাট হয়নি।
তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিএনপি-জামায়াতের ছোঁড়া পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী মাঈশা নাইমা তাসলিমের একটি আবেগপূর্ণ কাল্পনিক চিঠি সংসদে পড়ে শোনান।
সরকারি দলের আবদুল মতিন খসরু বলেন, আন্দোলনের নামে বেগম খালেদা জিয়া দেশে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছেন। এর দায় থেকে তিনি রেহাই পেতে পারেন না। তাকে মানুষ হত্যার হুকুমের আসামী হিসাবে বিচার করতে হবে।
এছাড়া তিনি বর্তমান সরকারের আমলে ধারাবাহিক উন্নতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, সব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল হয়েছেন। তিনি বর্তমানে বিশ্বে একজন বিচক্ষণ নেতা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
সুত্ত্রঃ বাসস