সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চায় বিএনপি
পক্ষকাল প্রতিবেদক : আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য নির্বাচনকালে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছে বিএনপি।
একই সঙ্গে ভোটারদের নিশ্চিন্তে ভোট প্রয়োগ এবং প্রার্থীদের প্রচার কাজ নির্বিঘ্ন করার পরিবেশ সৃষ্টি করাসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে দলটি।বুধবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ কথা বলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ।এর আগে তার নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শেরেবাংলা নগরস্থ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে।
হান্নান শাহ বলেন, ‘নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। নির্বাচনের অন্তত ১৫ দিন আগে তিন সিটিতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আমরা দাবি জানিয়েছি। সিইসি এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছি। নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতেই আমরাদের এসব দাবি। একটি বিশেষ দল যাতে কোনোভাবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত না হয়, সেজন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত ২০দলের সব নেতাকর্মীকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে এবং প্রার্থীদের তাদের নির্বাচনী প্রচার কাজ নির্বিঘ্নে চালানোর নিশ্চয়তা দিতে হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থীতা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হান্নান শাহ বলেন, ‘সিইসির সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। তিনি যথাসময়ে আবেদন করার কথা বলেছেন। তাহলে এ বিষয়টি তারা বিবেচনায় আনবেন বলেও আমাদের জানিয়েছেন। তবে তিনি প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা না করতে পারলে আমরা কাকে সমর্থন দেবো, সেটা সময় বলে দেবে।’
সিইসির কাছে বিএনপির অন্য দাবিগুলো হচ্ছে- বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ সব কার্যালয় খুলে দিতে হবে। দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদসহ ২০ দলের সব নিখোঁজ নেতা কর্মীকে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রমাণ দিতে হবে।
তাদের তুলে ধরা দাবির মধ্যে আরও আছে, প্রার্থী কিংবা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত নেতা কর্মীদের যারা সন্দেহমূলক মামলায় গ্রেফতার বা আত্মগোপনে আছে, তারা জামিন চাইলে তা মঞ্জুরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশ বা যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় বিরোধী নেতাকর্মীদের বাড়িঘর তল্লাশী বা হয়রানি করা যাবে না। রাজণৈতিক হয়রানিমূলক গ্রেফতার বন্ধ রাখতে হবে।’
প্রার্থীতা জমাদানের পর সব ধরণের সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান বন্ধ রাখার দাবিও করেছে তারা। তাদের দবি, শুধুমাত্র পোশাকধারী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দিনের বেলায় আসামি গ্রেফতার করতে যাবেন। এ সময় প্রতিবেশীদের জানানোর পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের পরিচয় দেবেন।
যেসব প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও তুলে ধরেন তারা। পাশাপাশি পেশীশক্তির ব্যবহার, ভোটকেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোট জালিয়াতি ও ভোট ছিনতাইয়ের খবর পেলে ইসিকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনী গণসংযোগ ও সভা সমাবেশের ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনী ফল প্রভাবিত করার অপচেষ্টায় মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ কোনো মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীকে বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত কাউকে ফল ঘোষণার আগে বা পরে গ্রেফতার ও হয়রানি করা যাবে না।
বিএনপির দাবি, ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ১৮ শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতে ২২ হাজার নেতা কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়াও লাখের বেশি মানুষকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অভিযুক্ত ছাড়া আটক সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দিতে হবে। পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতদের জামিনে মুক্তি দিতে হবে।
বিরোধীদল সমর্থিত সিটি মেয়রসহ এ যাবত যাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে বলেও দাবি জানান তারা।
প্রতিনিধি দলের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের আচরণে প্রতীয়মান হয় যে, তারা সরকারি এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। বিরোধীদলের নেতা কর্মীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে সরকারি দলকে বিশেষ সুবিধা দিতে কমিশন আগ্রহী। সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে সুযোগ না থাকলেও তাদের মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। এ বিষয়ে কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, একটা কথাও বলেনি।
তারা বলেন, ‘কমিশনের নিরপেক্ষতা ও সামর্থ নিয়ে জনমনে বিদ্যমান নেতিবাচক ধারনা বদ্ধমূল হয়েছে। আসন্ন নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, যোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের জন্য সম্ভবত সর্বশেষ সুযোগ। আমরা আন্তরিকভাবে চাই যে, কমিশন এই সুযোগ গ্রহণ করবে।’
বিএনপির প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান, এএসএম আবদুল হালিম, সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ, ইসির সাবেক সচিব আবদুল রশিদ সরকার ও সাবেক যুগ্ম-সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।