বিভিন্ন জেলায় ঝড়ে নিহত ১৪, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
পক্ষকাল ডেস্কঃ : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে অন্তত ১৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ব্যাপক।
শনিবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া ঝড়ে বগুড়ায় পাঁচজন, রাজশাহীতে চারজন এবং ঢাকা, পাবনা, নাটোর, সিলেট ও নওগাঁয় মারা গেছেন পাঁচজন।
ঢাকা
রাজধানী ঢাকার সদরঘাটে নদী পারাপারের সময় ঝড়ের কবলে পড়ে হানিফ শেখ (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ের সময় দু’নৌকার মাঝখানে চাপা পড়ে তিনি নিহত হন।
রাজধানীর রমনা থানাধীন মৎস্য ভবন সংলগ্ন রাস্তায় ঝড়ে বিলবোর্ড ভেঙে দুই রিকশাচালক ও এক প্রাইভেটকার আরোহী আহত হয়েছেন। আহত রিকশাচালদের একজন তারা মিয়া (৩৮)। অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়াও রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় জাকারিয়া (২৮) নামে একজন টিনের আঘাতে এবং ধোলাইপারে আবুল হোসেন (৩০) নামে একজন আহত হয়েছেন।
ঝড়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় কিছু এলায় পানির সঙ্কট দেখা দেয়।
রাজশাহী
ঝড়ে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ভেঙ্গে পড়েছে। উড়ে গেছে বাড়ি ঘরের টিনের চালা। ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়াসহ যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় বিকেল ৫টা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে বিভাগীয় শহর রাজশাহীসহ পুরো জেলা অন্ধকারের রয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানিয়েছেন, ঝড় বয়ে গেছে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় ধরে। ঝড়ের গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার।
তিনি জানান, ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। বিশেষ করে আমের মারাত্বক ক্ষতি হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের আম বাগানগুলোর অধিকাংশ আমের গুটি ঝরে গেছে।
ঝড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে তিনটি, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে ১৫টি, পরিবহন মার্কেটের সামনে তিনটি এবং ইবলিস চত্বরের সামনে তিনটি এবং মাদারবক্স হলের সামনে প্রায় সাতটি গাছ উপড়ে গেছে।
রাজশাহীতে চারজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের মৃত নজু মণ্ডলের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৬০) ও কিশোরপুর গ্রামের ইমাজ উদ্দিন (৪৫) এবং গোদাগাড়ির মনোয়ারা বেওয়া (৬৫)।
স্থানীয়রা জানান, ঝড়ের সময় মাটির ঘর চাপায় মারা যান জাহানারা বেগম। ঝড়ে নদীর পাড়ে মাটি চাপায় মারা যান ইমাজ উদ্দিন। ঘরের টিনের চাল চাপা পড়ে মনোয়ারা বেগম মারা যান। এছাড়া পবা উপজেলায় বড়গাছিতে আবুল হোসেন নামে একজন বজ্রপাতে মারা যান।
বগুড়া
শনিবার বিকেলে ঝড়ে বগুড়া সদর উপজেলায় দুজন এবং শাহজাহানপুর উপজেলায় দুজন মারা যান। ঝড়ে দেয়াল চাপায় শহরের বউ বাজার এলাকার আবদুল ওয়াহেদের স্ত্রী আজিরন বিবি (৩৮) ও মিলা (৬ মাস) মারা যান।
এছাড়া ঝড়ে শাহজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের লুৎফর রহমান (২৮) নামে একজন এবং রাবে বেওয়া (৪৫) নামের একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটফুলবাড়িয়ায় সুজন মিয়া (৩০) নামে একজন মারা যান।
পাবনা
পাবনা শহরের চাঁদমারী এলাকায় ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে জাম উদ্দিন (৮০) নামে এক চা বিক্রেতা বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাম উদ্দিনের বাড়ি পাবনা পৌর সদরের চক গোবিন্দা মহল্লায়।
নওগাঁ
নওগাঁর মান্দায় ঝড়ে দেয়াল ধসে শাহনাজ বেগম (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শাহনাজ মান্দা উপজেলার মহানগর গ্রামের বাসিন্দা।
সন্ধ্যায় ঝড়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাৎক্ষনিক তাদের নামপরিচয় পাওয়া যায়নি।
সিলেট ও নাটোর
এছাড়া সিলেটের বিয়ানীবাজার এবং নাটোরে বজ্রপাতে এক কৃষকসহ দুজন মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
জামালপুর
জামালপুরের পাঁচ উপজেলা- মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হেনেছে। এতে পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
মানিকগঞ্জ
সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঝড়ে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ও আধা-পাকা বেশকিছু ঘরবাড়ি এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টানা আধা ঘণ্টাব্যাপী এই ঝড়ে গাছ ভেঙ্গে পড়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন বন্ধ হয়ে যায়।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটেও লঞ্চ-ফেরিসহ সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। ঝড়ে বেশ কিছু খুঁটি উপড়ে পড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
ঝড়ের কারণে এলাকাবাসীসহ মহাসড়কে যানজটে পড়ে ও পাটুরিয়ায় ফেরিঘাটে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন। তবে, এই ঝড়ে জেলার কোথাও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।