সোমবার, ৬ এপ্রিল ২০১৫
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » রিভিউ খারিজ, কামারুজ্জামানের সামনে ফাঁসির দড়ি
রিভিউ খারিজ, কামারুজ্জামানের সামনে ফাঁসির দড়ি
পক্ষকাল ডেস্কঃ
যুদ্ধাপরাধী মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ
এর ফলে একাত্তরের হত্যা, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দণ্ড কার্যকরের বাধা কাটল।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন। সকাল ৯টা ৫ মিনিটে এজলাসে এসে প্রধান বিচারপতি বলেন, “ডিসমিসড”।
এর আগে রোববার কামারুজ্জামানের আবেদনের ওপর প্রায় দুই ঘণ্টা শুনানি হয়। কামারুজ্জামানের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলাম।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপিল বিভাগ আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে। এর ফলে মৃত্যুদণ্ডই বহাল থাকল।”
তিনি জানান, কামারুজ্জামান নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে পারবেন। এ বিষয়টির নিষ্পত্তি হলে সরকার দণ্ড কার্যকর করবে।
যুদ্ধাপরাধী এই জামায়াত নেতা সেই সুযোগ নেবেন কি-না, তা স্পষ্ট করেননি তার আইনজীবীরা।
কামারুজ্জামানের অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আজই উনার সঙ্গে দেখা করার উদ্যোগ নেব। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করব। তার সঙ্গে পরামর্শ করে দিক নির্দশনা নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
গতবছর ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের এই বেঞ্চই কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখে। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে একাত্তরে ময়মনসিংহের আল বদর নেতা কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
কামারুজ্জামানের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রায় পুনর্বিবেচনার জন্য শুনানিতে চারটি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, কিন্তু সেগুলো ধোপে টেকেনি।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এর বিরোধিতায় বলেছিলেন,”আজ যদি আমরা এই যুদ্ধাপরাধীদের অনুকম্পা দেখাই তাহলে আমরা কিন্তু ইতিহাসের কাছে দায়ী থাকব।”
জামায়াতে ইসলামীর আজকের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৭১ সালে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার প্রধান।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে জামালপুরের আশেক-মাহমুদ কলেজের ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা নেতাকর্মীদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। এই বাহিনী সে সময় ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও টাঙ্গাইলে ব্যাপক মাত্রায় যুদ্ধাপরাধ ঘটায় বলে আদালতের রায়ে উঠে এসেছে।
২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ে তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে হত্যার ঘটনায় কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
তৃতীয় অভিযোগে সোহাগপুরে ১২০ জনকে হত্যার ঘটনায় আপিল বিভাগের চার বিচারকও সর্বসম্মতভাবে কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করে। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে।
তবে চতুর্থ অভিযোগে গোলাম মোস্তফাকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ।
এছাড়া ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন ও ১০ বছর কারাদণ্ডের দুটি অভিযোগ বহাল রেখে যাবজ্জীবনের একটি অভিযোগ থেকে সর্বোচ্চ আদালত কামারুজ্জামানকে খালাস দেয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে।
রিভিউ খারিজ হওয়ায় কামারুজ্জামান নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ পেলেও যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ে কারাবিধির সাত দিনের বাধ্যবাধকতা প্রযোজ্য হবে না বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।
জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যার সর্বোচ্চ সাজার রায় কার্যকরের পর্যায়ে এল।
এর আগে আপিল বিভাগে আসা যুদ্ধাপরাধের প্রথম মামলায় জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।