মুন্সীগঞ্জে মহান ‘মে’ দিবস পালন
মোঃ হোসনে হাসানুল কবিরঃ আজ পহেলা মে; মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’—এই প্রতিপাদ্য নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে মে দিবস।শুক্রবার সকাল সারে ৮টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি রর্্যালী । জেলা প্রশাসক,প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার, অগ্রাণী ব্যাংক কার্মচারী সংসদ- সি বি এ, মুন্সীগঞ্জ জেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, মুন্সীগঞ্জ জেলা পেইন্টার্সা এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আওয়ামী মটরচালক লীগ, জাতীয় শ্রমীক লীগ, শিল্পায়ন আঞ্চলিক শাখা- মুন্সীগঞ্জ জেলা, জেলা ইলেকট্রনিক টেকনিশিয়ান এসোসিয়েশনের ব্যানারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি র্্যালী বের হয়। র্্যালীটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে থানারপুল ঘুরে জেলা শিল্পকলা ভবন প্রঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়।
পরে সাড়ে ৯ টায় শিল্পকলা মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) কুদ্দুস আলী সরকার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ-৩ সংসদ সদস্য এড. মৃনাল কান্তি দাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান আনিস, সহকারী পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।
এছাড়া অতিথি হিসেবে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা সদর কমান্ড এমএ কাদের মোল্লা। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি জামাল হোসেন, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এটি এম এ দেলোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা মেডিকেল অফিসার এনামুল করিম প্রমুখ।
বক্তারা শ্রমিক দিবসের উতপত্তি ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের আলোচনায় বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস (মে দিবস নামেও পরিচিত) মে মাসের প্রথম দিনটিকে পৃথিবীর অনেক দেশে পালিত হয়। বেশকিছু দেশে মে দিবসকে লেবার ডে হিসাবে পালন করা হয়। এদিনটি সরকারীভাবে ছুটির দিন।
প্রেক্ষাপট: ১৮৮৬ সালের এ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমজীবী মানুষ সব শিল্পাঞ্চলে আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন। শহরের হে মার্কেট হয়ে ওঠে তাদের বিক্ষোভ স্থল। শহরের ৩ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে শরিক হন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা লাল ঝান্ডা হাতে নেমে আসে রাজপথে। এ সময় শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। প্রাণ হারান ১০ শ্রমিক। রক্ত ঝরার পরেও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন যেন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। অব্যাহত থাকে ধর্মঘট। ৩ মে শ্রমিক সভায় পুলিশের নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারায় আরও ৬ শ্রমিক।
শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেট স্কয়ারে ঐতিহাসিক শ্রমিক সমাবেশে আবারও বর্বরোচিত হামলা চালায় পুলিশ। এতে প্রাণ হারান আরও ৪ শ্রমিক। পরে ৬ অক্টোবর মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪ শ্রমিক নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সেদিন মালিকরা মেনে নিয়েছিলেন, ‘শ্রমিকরাও মানুষ’। পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে পহেলা মে দিনটিকে ঘোষণা দেয়া হয় ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে। এ সিদ্ধান্তের পরিপেক্ষিতে ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে এ দিনটি ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।