সর্বকালের সেরা টাইগার জুটি
২০১৫ মে ০৩ পক্ষকাল ডেস্কঃ খুলনা টেস্টে তামিম-ইমরুল জুটি কে সর্বকালের সেরা টাইগার জুটি বলতে বোধ হয় কারো কোন আপত্তি নেই। খুলনা টেস্টে তামিম-ইমরুলের বিস্ময়কর জুটি নিজেদের নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। ৫৫ বছরের বিশ্বরেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন এ দুই ওপেনার।
১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ইনিংসে ইংলিশ ওপেনার কলিন কাউড্রে ও জিওফ পোলার ২৯০ রান তুলে রেকর্ডটি গড়েছিলেন। গতকাল ওপেনিং জুটিতে ৩১২ রান করে রেকর্ডটা নিজেদের করে নিয়েছেন তামিম-ইমরুল। কাউড্রে তো কিংবদন্তি। ক্রিকেট ইতিহাসে চিরদিন বেঁচে থাকবেন তিনি। তবে দুঃখটা থাকবে পোলারের।
মাত্র ২৮ টেস্ট খেলা এ ক্রিকেটার রেকর্ডের পাতায় বেঁচে ছিলেন ওই জুটিতেই। কিন্তু ৭৯ বছর বয়েসে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার ছয় মাস পার না হতেই তার নামটা মুছে গেল। সত্যিই বাস্তবতা ভীষণ নির্মম। যে কোনো পরিস্থিতিতে ঘুমিয়ে পড়ার এক আশ্চর্য ক্ষমতা নাকি ছিল এ ইংরেজের। এজন্য ‘নডি’ নামে তাকে ডাকতেন সতীর্থরা। তামিম-ইমরুল তো তার ওই নামেরই স্থায়ী পরিণতি দিলেন। চিরদিনের জন্য ক্রিকেট থেকে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন তারা। ৫৫ বছর আগে রেকর্ড করলেও তিনশ’ ছুঁতে পারেননি তারা। গতকাল তামিম-ইমরুল সে কাজটিও করেছেন।
এর পরও কিন্তু একটা আক্ষেপ থাকবে এ দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। আর মাত্র ১৭টি রান করতে পারলে আরও এক মহান কীর্তির মালিক বনে যেতেন তারা।১৩৮ বছরের ইতিহাসে খুলনা টেস্ট দুই হাজার ১৫৯তম। আর মাত্র ১৭টি রান করতে পারলে সর্বকালের সেরা ওপেনিং জুটির তালিকায় ঢুকে যেতেন তারা। এ তালিকায় তারা এখন ১২ নম্বরে। তবে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনিং জুটি ডেসমন্ড হেইন্স ও গর্ডন গ্রিনিজের ওপরে আছেন। ২৯৮ রানের জুটি গড়েছিলেন দুই ক্যারিবীয় কিংবদন্তি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে যে কোনো উইকেট জুটিতে রান তোলায় তারা দশম স্থানে।
এসব তো গেল বিশ্ব রেকর্ডের কথা। অবশ্য দেশের পক্ষে সেরা জুটি তারা টপকে গেছেন পরশু দিনই। ২০১৩ সালে গলে শ্রীলংকার বিপক্ষে মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ আশরাফুলের ২৬৭ রান ছিল এতদিনের সেরা। দেশের পক্ষে সেরা ওপেনিং জুটিটা অবশ্য তাদেরই ছিল। গত নভেম্বরে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২২৪ রান করেছিলেন তারা দু’জন। দুই বাঁহাতির মধ্যে বোঝাপড়াটা যে দারুণ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
চট্টগ্রামে রেকর্ড করার পর তামিম বলেছিলেন এ কথা। এবার আবার সে কথাই যেন প্রতিধ্বনিত হলো তার কণ্ঠে, ‘আমাদের দু’জনের বোঝাপড়াটা অনেক পুরনো। কথা বলতে হয় না, একে অন্যের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি কে কী চাইছি আমরা।’ এই যেমন ২৯৬ রানের বোঝা মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নামার সময় তাদের মধ্যে নাকি ব্যাটিং কৌশল নিয়ে কোনো কথাই
হয়নি বলে জানিয়েছেন তামিম, ‘আমরা জানতাম, আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা ছিল।
পুরোপুরি রক্ষণাত্মক খেলতে হবে, না হলে আক্রমণ। মাঝামাঝি কিছু হলে চলবে না। আমরা আক্রমণের পথটিই বেছে নিলাম। তবে এ নিয়ে কিন্তু আমার ও ইমরুলের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। এমনিতেই আমরা বুঝে গিয়েছিলাম কী করতে হবে।’ ইমরুলের মুখেও একই কথা, ‘আমার খুবই দুর্বল লাগছিল। যখন দেখলাম তামিম শটস খেলা শুরু করেছে, তখন আমার মনে ধরে খেলাটাই এখন যৌক্তিক। তবে ধীরে ধীরে আমিও শটস খেলা শুরু করি। আমাদের মধ্যে এসব বিষয় খুবই পরিষ্কার। তামিম মারতে থাকলে আমার কী করতে হবে সেটা বলে দিতে হয় না। উইকেটের মাঝে কথা বলে একে অন্যকে উজ্জীবিত করার ব্যাপারটিও আমাদের সহজাত।’
অথচ তারা দু’জন ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনো লেবেলেই নাকি এক দলে খুব একটা খেলেননি। কয়েক মৌসুম আগে নাকি প্রিমিয়ার লীগে এক দলে ছিলেন। তার পরও মাঝে বোঝাপড়াটা এত ভালো কেমন করে! ব্যাপার বের করতে অবশ্য খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। ইমরুল কায়েস নিজেই বলে দিয়েছেন, ‘আমার সব বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মজা করে তামিম। আমাদের সম্পর্কটাও খুব মজার। হয়তো এজন্য দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো।’
টেস্ট ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ
পার্টনার/ দেশ রান প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল
ম্যাকেঞ্জি-স্মিথ (দ.আফ্রিকা) ৪১৫ বাংলাদেশ চট্টগ্রাম ২০০৮
মানকড়-রয়(ভারত) ৪১৩ নিউজিল্যান্ড চেন্নাই ১৯৫৬
শেবাগ-দ্রাবিড় (ভারত)৪১০ পাকিস্তান লাহোর ২০০৬
টার্নার-জারভিস (নিউজিল্যান্ড) ৩৮৭ উইন্ডিজ জর্জটাউন ১৯৭২
লরি-সিম্পসন (অস্ট্রেলিয়া) ৩৮২ উইন্ডিজ ব্রিজটাউন ১৯৬৫
স্মিথ-গিবস (দ. আফ্রিকা) ৩৬৮ পাকিস্তান কেপটাউন ২০০৩
হুটন-ওয়াশব্রুক (ইংল্যান্ড)৩৫৯ দ.আফ্রিকা জো.বার্গ ১৯৪৮
স্মিথ-গিবস (দ. আফ্রিকা)৩৩৮ ইংল্যান্ড বার্মিংহাম ২০০৩
আতাপাত্তু-জয়সুরিয়া (শ্রীলংকা)৩৩৫ পাকিস্তান ক্যান্ডি ২০০০
মার্শ-টেলর (অস্ট্রেলিয়া)৩২৯ ইংল্যান্ড নটিংহ্যাম ১৯৮৯
হবস-রোডস (দ. আফ্রিকা)৩২৩ অস্ট্রেলিয়া মেলবোর্ন ১৯১২
তামিম-ইমরুল (বাংলাদেশ) ৩১২ পাকিস্তান খুলনা২০১৫