লক্ষ্মীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে পাঠদান
রুবেল হোসেন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের জগৎবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরো ভবনটি দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। বিকল্প কোন ব্যবস্থ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মেঝেতে কাগজ বিছিয়ে পাঠদান দিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। পাঠদানের অনুপযোগী শ্রেনি কক্ষ এবং পর্যাপ্ত বেঞ্চের অভাব, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে। আর সঠিক সময় শিক্ষার্থীদের পাঠ দান দিচ্ছেন না শিক্ষকরা। পাশাপাশি অনেকটা চিন্তিত ও শস্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার ২১নং টুমচর ইউনিয়নের ৯নং ওযার্ড জগৎবাড়ি গ্রামের জগৎবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন এক করুন দূর্শ্য। স্কুলে প্রধান শিক্ষককে না পাওয়া গেলেও ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম ও এক শিক্ষিকা অফিস রুমে বসে দু’জনে গল্প করছে। আরো এক সহকারী শিক্ষিকা স্কুলের বারান্দার মুঠো ফোনে মর্গ্নে ছিলেন আর শিক্ষার্থীরা মেঝেতে বসে দৃষ্টামি করছে।
অফিস কক্ষে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে সহকারী শিক্ষকরা জানান, আমাদের এই বিদ্যালয়টি ১৯৮৮ সনে স্থাপিত হয়। ১৯৯৪ সনে ৪টি রুম নিয়ে একতলা বিশিষ্ট নব গঠিত ভবনটি নিম্মিত হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে বিদ্যালয় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ন রুপ নিলে ২০১১ সনে নতুন ভবন করার জন্য মাটি পরিক্ষা করে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। পরে ২০১৩ সনে ৭এ জুলাই বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষনা করে সদর উপজেলা শিক্ষা কমিটি। মাটি পরিক্ষায় ৪ বছর হলেও নতুন ভবনের দেখা পায়নি স্কুল কতৃপক্ষ। স্কুলের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়টি বেশ কয়েকবার চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চিঠি পেয়ে তারা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলেও এখনো পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসকল বিষয়ে বার বার আবেদন করেও কোন সুরাহা হয়নি।
প্রথম শ্রেনির ছাত্র জুয়েল জানান, এই স্কুলে আমার অনেক বন্ধু ছিলো স্কুল ঘরটি ভাঙ্গা ও বসার বেঞ্চ না থাকায় তারা অনেকে এখন স্কুলে আসে না। এভাবে আরো এক শিক্ষার্থী জানায়, শহরের ছেলে-মেয়েরা ভালো ভালো স্কুলে পড়ে। কিন্তু আমাদের স্কুলে কোন সৌন্দর্য নাই। ভালো টয়লেট ও ভালো খেলার মাঠও নাই এবংকি পিপাসা মিঠাতে পানিও পায়না। যা একটা চাপা কল আছে তাও নষ্ঠ।
প্রধান শিক্ষক মোঃ সিদ্দিক উল্যা মুঠো ফোনে জানান, বিদ্যালয়ের বিষয়টি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে বার বার জানানোর পরেও নতুন ভবন ও বিদ্যালয়টি মোরামতের কোন কাজ এখ নপর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। ক্লাস ফাঁকির ব্যপাওে জানতে চাইলে তিনি জানান, এলাকার এক শ্রেনির মানুষ আছে যা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করে বেড়ায়।
ইউছুফ (৬০) নামের এক এলাকাবাসি জানায়, সরকার বলে ডিজিটাল যুগ। সবকিছুর নাকি পরিবর্তন হয়েছে। অথচ আমাদের গ্রামের রাস্তা-ঘাট গুলোও ভালো নেই। স্কুলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষকরা সঠিক ভাবে লেখাপড়া করায় না এবং স্কুল ভবনের যে অবন্থা যে কোন সময় একটি বড় ধরণের র্দুঘটনা ঘটতে পারে। স্কুলটি যেন মূত্যকুপে পরিনত হয়ে আছে। আমার দু’নাতিকে এই স্কুলে না দিয়ে তাদের পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাসিনা ইয়াসমিন জানান, যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ঢাকা পরিকল্পনা উন্নয়ন শাখা থেকে আমাদের কাছে তালিকা চেয়েছে। আমরা জগৎবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১নং তালিকায় দিয়ে পাঠিয়েছি। আশা করি খুব শীঘ্রই বিদ্যালয়টি নতুন ভবন নির্মান হবে বলে তিনি বলেন।
এব্যপারে জেলা প্রশাসক একে,এম টিপু সুলতানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।