বুধবার, ৬ মে ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » চুনারুঘাটে পাকা ধান মাঠে-শ্রমিকের মজুরি বেশি হতাশ কৃষকরা।
চুনারুঘাটে পাকা ধান মাঠে-শ্রমিকের মজুরি বেশি হতাশ কৃষকরা।
হবিগঞ্জ থেকে-
চুনারুঘাট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বোরো ধানকাটার ধুম পড়েছে। তবে সর্বত্র কৃষি শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে ধান কাটতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বাম্পার ফলন হয়ে থাকলেও ধানের মূল্য কম থাকায় কৃষকের মূখে নেই হাসি। তারপরেও কৃষি শ্রমিকের মূল্য খুবই চড়া। দৈনন্দিন ২ বেলা খাবার দিয়ে ও ৩শ’ টাকা থেকে ৩শ’ ৫০ টাকা দিয়ে ও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এতে করে নির্ধারিত সময়ে ধান কেটে ঘরে আনা সম্ভব হবে না। এখন পুরো দমে ধান-কাটার মৌসুম চলছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, চুনারুঘাট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৩শ’ ৫ হেক্টর জমি। তন্মধ্যে আহম্মদাবাদ ইউনিয়নে ২শ’ ৫০ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। এ গুলোর মধ্যে প্রায় বেশির অংশ জমিতেই বিদ্যুতের মাধ্যমে আবাদ হয়েছে। এ বারে কৃষকদের মধ্যে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। একবার গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে ফলন ভালো হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে কয়েকদফা কাল বৈশাখীর ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে বিভিন্ন ইরি-বোরো ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। ফলে কৃষকরা এখন আধা পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিছু-কিছু এলাকায় কাল বৈশাখী বাতাসে ধান পড়ে গেছে। ধান ঘরে তোলা নিয়ে কৃষককুল ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। চুনারুঘাটের রাজার-বাজার, আমুরোড, জারুলিয়া ও আসামপাড়াসহ বিভিন্ন হাট বাজারে নতুন ধান উঠলেও বেচা কেনা খুবই কম। এদিকে চুনারুঘাট উপজেলার ২নং ইউনিয়নের ধান ব্যবসায়ী হুসেন আহমদ জানান, চিকন ধান প্রতিমণ ৪শ’ টাকা থেকে ৪শ’ ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা ধান প্রতিমণ ৪শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চুনারুঘাট উপজেলার ২নং ইউনিয়নের পাইকারী চাল ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানান, নতুন চিকন চাল (৫০) কেজি প্রতিবস্তায় ২৮ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪শ’ টাকা থেকে একহাজার ৪শ’ ৫০ টাকা। নতুন মোটা চাল (৫০) কেজি প্রতিবস্তায় বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে একহাজার ১শ’ ৫০ টাকা। ২নং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের গোছাপাড়া গ্রামের কৃষক মো: দেওয়ান মিয়া জানান, বড় আশা নিয়ে এক-একর জমি বোরো ফসল করে ছিলাম। কিন্তু গতকয়েক দিনের কালবৈশাখীর শিলা বৃষ্টিতে বোরো ধান এক দম নষ্ট হতে পরতে বসেছিল। অথচ এ ফসল করতে যে টাকা খরচ করেছি তা উঠবে না। ফলে আগামীতে অনেকেই বোরো ফসল করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা ইউরিয়াসহ বিভিন্ন সার বেশি দামে কিনে দিয়েছিল জমিতে। তারপরে আবার বেশি দামে মজুরি দিয়ে ধান রোপনসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্চা করা হয়। বিভিন্ন এলাকা সরে-জমিনে ঘুরে দেখা গেছে যে, কৃষি শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা যাচ্ছে না। শ্রমিকের অভাবের কারন হচ্ছে যে, অনেকেই বাটি অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মস্থানে চলে গেছে। আবার কেউ-কেউ ফ্রি-ভিসায় বিদেশ বাড়ীতে চলে গেছে। এক সময় চুনারুঘাটের আমুরোডে বাল্লা রেল স্টেশনে বিভিন্ন স্থান থেকে শত-শত শ্রমিক আসতো কৃষি কাজ করার জন্য। কিন্তু ভাগ্য নির্মম পরিহাস যে, কালের পরিবর্তনের সে দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। দিন বদল পালার সাথে সাথে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এবারে বিদ্যুতের ভয়াবহ সর্বনাশা লোডশেডিংয়ের ফলে কিছু-কিছু বোরো ফসল আশানুরূপ ফলন হয়নি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ভালো বোরো ধান হয়েছে। ফসলের মধ্যে কোন ধরনের আক্রমণ হয়নি। সারের দাম বাড়েনি। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে ভালো বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বোরো ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে।